বাংলাদেশ

জিওপলিটিক্যাল বিষয়গুলো বাদ দিলেও আমাদের আরো অনেক দিক থেকে গুরুত্ব আছে। যেমন ধরেন প্রাকৃতিক সম্পদ। এই দিক থেকে বাংলাদেশের গুরুত্বের জায়গাটা বাংলাদেশীরা নিজেরাও জানে না। বাংলাদেশীরা জানে না, পৃথিবীর সবচাইতে বাসযোগ্য ভূমিতে তারা বাস করে। বিংশ শতাব্দীতে গুরুত্বপূর্ন প্রাকৃতিক সম্পদ ছিলো তেল। এই শতাব্দির গুরুত্বপূর্ন সম্পদ হচ্ছে পানি ও কৃষিজমি। আমরা এই দিক থেকে কতটা সমৃদ্ধ, এটা অনেকেই জানে না। আমেরিকানরা কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ন। কিন্তু, ওদের জমি আমাদের মত উর্বর না। যেকোন সময় ওরা কৃষিতে ধরা খেয়ে যেতে পারে। ইউরোপেরও একই অবস্থা। রাশিয়া এবং ভারতেরও। আরবদের তো কৃষি জমিই নাই। কৃত্তিমভাবে বানানোর চেষ্টা করছে। চায়নাও গোবি মরুভূমিরে সবুজ করার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে গত ২০/২৫ বছর ধরে।

একটা গবেষণামূলক ভিডিওতে দেখেছিলাম, পৃথিবীতে যদি একটাই শহর থাকতো, সেই শহরটা হতো ঢাকা, বাংলাদেশ। এই দিক থেকেও আমাদের অবস্থান এক নাম্বারে। (ভিডিওটা Inspire to Learn গ্রুপে শেয়ার করেছিলাম কয়েক বছর আগে। খুঁজে পেলে কমেন্টে দেব।)

পরিচিত বেশ কিছু ফ্যামিলি স্থায়ীভাবে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছে। একজনের সাথে কথা হলো একটু আগে, তার পরিচিত ফ্যামিলিরাও দেশ ছাড়ার প্রসেসিং-এ আছে। এরা সব পয়সাওয়ালা ফ্যামিলি যাদের পক্ষে ইউরোপ/আমেরিকায় ৫/৬ কোটি ইনভেস্ট করে ওখানে ফুল ফ্যামিলি থাকার ব্যবস্থা করার ক্ষমতা আছে। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক মন্দা এড়াতে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো পয়সাওয়ালা ও ইনভেস্টরদের নানা ধরনের প্যাকেজ দিচ্ছে তাদের দেশে মাইগ্রেট করার জন্য। এসবের সুবিধা নিচ্ছে অনেকে। আগামী কয়েক বছর এসব সুবিধা নেয়া লোকের সংখ্যা জ্যামেতিক হারে বাড়তে পারে।

ঐদিকে মেধাবীদের দেশ ছাড়ার হার আগের থেকে বাড়ছে। উদ্যোক্তারাও এদেশে ভরসা পাচ্ছে না। এপেক্সের মালিক দেখলাম কয়েকদিন আগে বলছেন ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার কথা। অব্যবস্থাপনা কমানো না গেলে এবং সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নতুন বিনিয়োগও কমে আসবে।

তো কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যও ও এইসবের ইমপ্যাক্ট নিয়া ভাবতেছিলাম। পরিস্থিতি সবদিক থেকেই জটিলতর হচ্ছে।

এটলিস্ট এটা বুঝা যাচ্ছে যে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের সরাসরি রাজ্য হওয়ার পরেও যতটুকু স্বাধীন আমরা ততটুকু নই। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন রিগ করতে পারে না দিল্লী, আমাদেরটা পারে।



ইউনেস্কোর এই ম্যাপটা দেখলে বুঝতে পারবেন। চায়না, রাশিয়া, জাপান, ইন্ডিয়া, ইভেন ইতালিতে স্কুল-কলেজ সব খোলা, কিছু জায়গায় পার্শিয়ালি খোলা। কিন্তু খুব কম দেশই আছে যেইখানে পুরাপুরি বন্ধ।

এক বছরের বেশী সময় ধরে বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ সব বন্ধ। এতে কী হচ্ছে? এতে দু'টো শিক্ষাবর্ষে পড়ালেখা হয়নি। শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় গ্যাপ পড়ে গিয়েছে। এরকম গ্যাপ পড়লে আবার পড়ালেখায় ব্যাক করা কতটা কষ্টকর সেটা অনেকেই জানেন আশা করি। এই শিক্ষার্থীদের আর পড়ালেখা হবে?

এর সাথে যোগ হয়েছে অটো-পাশ। যারা বর্তমান ক্লাশের পড়া না পড়েই নতুন ক্লাশে উঠে গেল, তারা আর বুঝতে পারবে না কিছু। ফলে, তাদের বাকী শিক্ষা জীবন হুমকির মুখে পড়ে গেল।

১২-টা ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংস হওয়ার পথে আছে। এর কুফল আপনি টের পাবেন ১৫-২০ বছর পরে। এমনি এদেশে যোগ্য লোকের খুব অভাব। এই ঘটনার পর আর লোক পাওয়াই যাবে না। ২০ বছর পর দেখবেন দেশের অধিকাংশ জব করতেছে ভারতীয়রা। আর বাংলাদেশীরা সব তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী, পিওন হয়ে বসে আছে। যে অল্প কিছু মানুশ পারিবারিক সচেতনতার কারণে পড়ালেখা করেছে, এরা সব দেশ ছাড়বে তখন। পরিস্থিতিটা কেমন হবে, কল্পনা করে দেখেন।

এই মূহুর্তে এটা দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত, কিন্তু কোথাও কোন আলাপ নাই।

সেফুদাঃ মদ খা!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীঃ সাবধানে খাইস!!

আমার পূর্বপুরুষদের চারপ্রজন্ম পর্যন্ত ইতিহাস জানি। আমার বাবা-চাচা, দাদা, দাদার বাবা ও চাচা, তাঁর বাবা ও চাচা। আমার দাদা এবং তাঁর পূর্বপুরুষেরা সব ছিলেন শিক্ষক ও ডাক্তার। কিন্তু একইসাথে তাদের অনেক জমি ছিলো এবং সেখানে তারা চাষ করতেন। তার মানে কৃষকও। কৃষি কাজ নিয়ে তাদেরকে কখনো লজ্জিত হতে শুনিনি বরং প্রচুর ফসল আর মাছের উৎপাদন থাকায় শিক্ষকতা ও ডাক্তারি বলতে গেলে বিনা পয়সাতেই করতেন। শিক্ষক ও ডাক্তার হিসেবে উনাদের অনেক সুনাম ছিলো। চাইলে কৃষি কাজ না করেও ভালো থাকতে পারতেন।

মাঝে মাঝে ভাবি, কবে থেকে ও কিভাবে আমরা কৃষি কাজরে ছোট হিসেবে দেখা শুরু করলাম?

মানুষের একদম কোর চাহিদা মূলত তিনটা। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান। এর ভেতরে বাসস্থান আর যথেষ্ঠ বস্ত্র ছাড়াও মানুষ বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু খাবার ছাড়া সম্ভব না। ধরেন, পৃথিবীতে যদি খুব বড় ধরনের কেওয়াস লেগে যায়, তখন শুধুমাত্র কৃষি নির্ভর দেশগুলো সার্ভাইব করবে, বাকীরা.. যারা খাদ্য আমদানী করে টিকে থাকে, তারা সার্ভাইব করবে না। আবার, যাদের খাবার উৎপাদন যন্ত্র ও প্রযুক্তি নির্ভর, তাদের পক্ষেও কঠিন হবে (যেমন ইউরোপ-আমেরিকা)। শুধু কৃষি নির্ভর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সম্ভবত পৃথিবীতে এক নাম্বার। মানে, এখানকার মাটি কোনরকম সার-যন্ত্র ছাড়াই এমনি ফসল ফলানোর উপযোগী। যেটা এক্সট্রিম সিচ্যুয়েশনের জন্য জরুরী। মানে, আপনার সার নাই, যন্ত্র নাই, প্রযুক্তি নাই... বীজ মাটিতে ফেলে দিলেন আর ফসল হলো, খেয়ে বেঁচে রইলেন। এই সুবিধাটার জন্য পৃথিবীর সবচাইতে খারাপ সময়েও আমরা টিকে থাকবো।

বাংলাদেশের কিছু পাবলিক এত কিউট যে⁠— গত দশ বছরে ট্যাক্স ভ্যাট কয়েকগুন বাড়ার পরেও, বিদ্যুৎ বিল থেকে শুরু করে সকল খরচ এত এত বাড়ানোর পরেও কোন ব্যর্থতার দায় সরকাররে দিতে রাজী না। সব দোষ তারা চাপায় নিরীহ জনগনের উপরে। হাউ সুইট!

এরকম দ্যাশে রাজনীতি করার মজাই আলাদা!

আত্মসমালোচনা ভালো। কিন্তু অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। আবার না-জেনে ব্লেইম করা খারাপ। আমাদের অনেক সমস্যা আছে। কিন্তু কিছু সমস্যায় বাঙালি কিংবা বাংলাদেশীরা ইউনিক না। এই যেমন- হুজুগ। বাঙালির চাইতেও অনেক বেশী হুজুগে জাতি আছে। পাবলিকের আইন ভঙ্গ করা, সচেতনতার অভাবও শুধুমাত্র আমাদের একার সমস্যা না। আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটি করোনাতে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত। এর ভেতরেও নেভির একটা হসপিটাল জাহাজ আসছে শুনে দলে দলে নিউয়র্কবাসী লকডাউন ভঙ্গ করে সেটা দেখতে গেছে (ভিডিওর লিংক)। যুক্তরাজ্য (ইংল্যান্ড) এর অথরিটি ঘোষণা দিয়েছে পাবলিক কথা না শুনলে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে (বিবিসিতে নিউজ আছে, দেখেন)। ইটালিসহ আরো অনেক দেশে পাবলিকরে রাস্তায় নামা থেকে বিরত থাকার জন্য জরিমানার ব্যবস্থা চালু করতে হয়েছে। অনেক দেশে তো কার্ফিউ পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। আমেরিকার মত জায়গায় বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাচ্ছে। চায়নাকে রাতারাতি হাজার হাজার বেডের হসপিটাল তৈরি করতে হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য। তাও সবাই হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে।

সুতরাং... পাবলিক কিংবা কোন পেশার মানুষদের ব্লেইম আর নিজেদের জাতি নিয়ে মিম তৈরির আগে একটু জেনে নিলে ভালো হয়। নিজের অজ্ঞতার কারণে অন্যদের নিয়ে হাসাহাসি ও পুরো জাতি তুলে গালাগালি না করাই ভালো।

জম্বি এপোকেলিপস মুভিগুলোতে দলে দলে জম্বি এসে আক্রমণ চালাতে দেখেছিলেন না? পরিস্থিতি কয়েক মাসের ভেতরে স্বাভাবিক না হলে এবং গরীব মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করা না গেলে, জম্বিদের মতই এরা আপনার আমার বাসায় এসে হামলা চালাবে। লাখ লাখ না খেয়ে থাকা লোকের এই এ্যাটাক থামানোর ক্ষমতা পৃথিবীর কোন সেনাবাহিনীর নাই। প্রথমে আক্রান্ত হবে রাজনৈতিক নেতা ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা। সুতরাং... দল-মত নির্বিশেষে আন্তরিকভাবে এই দূর্যোগ মোকাবিলায় অংশ নিন। কোটি কোটি মানুষকে অভুক্ত রেখে নিরাপদে থাকা যায় না।

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি