সুমাইয়া তাসনিমের আদমসুরাত

সাউন্ড ক্লাউডে ব্রাউজ করতে করতে একটা গান খুব পছন্দ হয়ে গেল। এত চমৎকার লিরিক, সুর! একটা মেয়ে কাজ করতে করতে অ্যামেচার মুডে গুনগুন করে গাচ্ছিলো। গুগল-ইউটিউব তন্নতন্ন করে খুঁজেও 'মূল' গানটার কোন হদিস পেলাম না। সাউন্ড ক্লাউডে যিনি আপলোড করেছেন তার প্রোফাইলে গিয়ে দেখি নাম Sumaya Tasnim. নামটা পরিচিত লাগছিলো, প্রোফাইল পিকচার দেখে আরো পরিচিত মনে হলো। ফেসবুকে এসে সার্চ করে নিশ্চিত হলাম। সুমাইয়া তাসনিমকে তো আমি চিনি। গ্লিয়েরা ম্যাগাজিনে চমৎকার কিছু প্রবন্ধ লিখেছিলেন। মূল গানটার লিংক চেয়ে ইনবক্স করলাম। জানালেন এটা তার নিজের লেখা কবিতায় এমনি গুনগুন করে সুর দিয়েছেন। সুমাইয়া তাসনিমকে একজন ভাল প্রাবন্ধিক হিসেবে জানতাম। কবিতাও লিখেন, জানা ছিলো না। নিজের কবিতায় সুর দিয়ে সেটাকে সঙ্গীতে পরিনত করে নিজেই সেই সঙ্গীতের শিল্পী হওয়াটা একটা অনবদ্য ব্যাপার।

বইমেলা শুরু হওয়ার পর একদিন জানালেন বইমেলায় তার কবিতার বই আসছে, 'আদমসুরাত' নামে। আমি তখন উইশলিস্টে থাকা বইগুলো কার্টে এড করে অর্ডার করতে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম উনার বইয়ের জন্য অপেক্ষা করি। এরপর একদিন জানালেন বই বাজারে এসেছে। অর্ডার করলাম। আরো এক ডজন বইয়ের সাথে 'আদমসুরাত' বইটাও হাতে পেলাম। যে বইগুলোর জন্য এতদিন অপেক্ষা করছিলাম সেগুলো রেখে 'আদমসুরাত' নিয়ে বসলাম। 

এবছর বইমেলা থেকে কেনার জন্য নয়টা কবিতার বই উইশলিস্টে তুলে রেখেছি। ইতিমধ্যে সাতটা হাতে পেয়েছি। কবিতার বই একদিনে পড়ে শেষ করার বস্তু নয়। কিন্তু আমার তো তর সয় না। কেনার দুই দিনের ভেতরেই সবগুলো পড়ে শেষ। শেষ বলতে, একনজরে পড়ে ফেলি। এর মাঝে কিছু কবিতায় চোখ আটকে যায়, সেগুলো বার বার পড়া হয়। তেমনি কয়েকটা কবিতার ভেতরে এটা একটা—

আশার প্রদীপ

মানুষ তুমি এত আশার প্রদীপ জ্বালায় কী করো?
কী হইবো যদি আশা পুরা হয়?
কী করবা তারপর?
নতুন আশা?
জিরাইয়া লও এবার।আর কত মিছা দিন গুনবা?
স্বপ্নের রোদ পোহাইবা চরাচরের ক্ষ্যাতে?
এই ক্ষ্যাতের ফসল তোমার ঘরে যাইবো নাহ্ ।

'কী করবা তারপর?'

এই লাইনটায় অনেক্ষন চোখ আটকে রইলো। অনেক বছর আগে হিলারী ক্লিনটনের 'মাই লাইফ' পড়ার সময় একটা জায়গায় এসে থেমেছিলাম। হিলারী বলতেছিলেন যে, উনারা তখন ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে পলিটিক্যাল ক্যাম্পেইন করছিলেন। সেই ক্যাম্পেইন নিয়ে কত আশা-ভরসা এবং কত পরিশ্রম। তারপর যখন উনাদের বিজয় চলে আসলো, তখন হিলারীর মনে হতে থাকলো, এরপর কী? নিজেরে উনার বেকার মনে হইতে লাগতেছিলো।

আসলেই, কী করবা তারপর? আমরা তো ভাবি না।  সাফল্যের স্বপ্নগুলো যে বাবল তৈরি করে, আমরা তার ভেতরে আটকা পড়ে যাই। তারপর কী করবো আর ভাবি না। ভাবতে চাইও না হয়তো। 

কবিতার শেষের লাইনগুলি আর্নেস্ট হেমিংওয়ের 'দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সী' এর কথা মনে করিয়ে দিলো। 

এরকম আরো কয়েকটা কবিতায় চোখ আটকে গেলো। সব একবারে বলতে গেলে লেখা খুব বড় হয়ে যাবে। তাছাড়া, পুরো কবিতার বই একদিনে  পড়ে শেষ করে ফেলাও ঠিক না। আস্তে আস্তে পড়বো। তবে এক কথায় বলতে পারি— সুমাইয়া তাসনিম হতাশ করেননি।



ত্রিভুজ আলম

ত্রিভুজ আলম

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখালেখি

লেখকের আরো লেখা

ত্রিভুজ আলম কমিউনিকেশন স্কিল - ১

কিছু মানুষকে দেখবেন আপনার খুব ভালো লাগে আর কিছু মানুষকে বিরক্তিকর। কিছু মানুষ সহজেই আপনাকে সব বুঝিয়ে দিতে পারে আর কিছু মানুষ সারাদিন কথা বলেও বোঝাতে প...

ত্রিভুজ আলম বারমুডা ট্রায়াঙ্গল - একটি সফল বানিজ্যিক রহস্য!

মানুষ স্বভাবগত ভাবেই রহস্য প্রিয়। রহস্য প্রিয় মানুষেরা রহস্যের খোঁজে বের হয়ে যুগে যুগে পৃথিবীর জন্য অনেক কিছু করেছেন তাই রহস্যপ্রিয়তাকে মানুষের স্বভাব...

ত্রিভুজ আলম ভাইরাসমুক্ত নিরাপদ কম্পিউটার

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের ভেতরে এরকম কাউকে খুঁজে পাওয়া দুস্কর যিনি কখনো ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারের পেছনে অনেক টাক...