// বাংলাদেশের শিক্ষা-ব্যবস্থা
বাংলাদেশের পড়ালেখার সিস্টেমটা কিরকম জানেন? এখানে আপনাকে প্রথমে পুটিমাছ ধরতে শেখাবে। তারপর কৈ মাছ। তারপর রুই মাছ.. তারপর কাতলা মাছ। এভাবে যতপ্রকার মাছ আছে আপনি সারাবছর সেগুলো ক্যামনে ধরতে হয় শিখতে গিয়া খালি পড়বেন আর পড়বেন। সব মুখস্ত করে ফেলবেন। বাস্তব জীবনে এই বিদ্যা কোন কাজে আসে না। কারণ, ক্যারিয়ারে গিয়া আপনার এমন মাছ ধরতে হইবো যেইটা আপনার স্কুল-কলেজ শেখায় নাই।
শেখানোর কথা ছিলো 'মাছ কেমনে ধরতে হয় সেইটা'। তাহলে আপনি যেকোন মাছই ধরতে পারতেন, সারাবছর দৌড়ের উপরেও থাকতে হতো না।
অল্প কিছুদিন আগেও আরবরা না খেয়ে মারা যেত। তখন তারা নিজেরাও জানতো না, তাদের মাটির নিচে কি লুকায়া আছে। যেমন আমরা জানি না, আমাদের জনসংখ্যা কত বড় এ্যসেট। শুধু দরকার এদেরকে একটু শেইপে আনা। উন্নত বিশ্বে যে হারে মানুষ কমতেছে তারচাইতেও ভয়াবহ হারে দক্ষ কর্মী কমতেছে। দুইদিন পর আমাদের দেশের রাস্তার মোড়ে মোড়ে তারা ইমিগ্রেশন সেন্টার খুলে লোকজনের হাত-পা ধরে নিজের দেশে নিয়ে যাবে। এখনি অবশ্য নিচ্ছে। বিভিন্ন ভার্সিটির মেধাবীদের তারা ভালোই হান্ট করতেছে। তবে যারা অদক্ষ, তাদেরকে কেউ নিবে না। দেশেও তারা কিছু করতে পারবে না।
তাই ছোট্টবন্ধুরা, তোমরা ক্যারিয়ারের প্রতি মনোযোগী হও। প্রশ্ন ফাঁস আর গণহারে পাশের আশায় পড়ালেখা বাদ না দিয়া ঠিকঠাকমত লেখাপড়া করো, দক্ষতা বাড়াও। মানুষ রপ্তানী করেই আমরা ভবিষ্যতে এই দেশরে অনেক উপরে নিয়ে যেতে পারবো।
আমার প্রফেশনাল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিলো হসপিটালের ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার বানানোর মাধ্যমে। প্রথম সফটওয়্যারটা বানিয়েছিলাম একটা হাসপাতালে বসে। ওখানে আমার জন্য একটা রুম বরাদ্দ ছিলো। আর যে ডাক্তার আংকেলের হাসপাতালের সফটওয়্যার বানাচ্ছিলাম, তাঁর একটা গবেষণায় সাহায্য করার জন্য একটা এনালাইসিস টুলও বানাচ্ছিলাম যেটার জন্য উনার ব্যাক্তিগত প্রাকটিস চেম্বারে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাতে হয়েছে। রোগীর চাপ একটু কমে আসলেই টুলটা ডেভেলপের জন্য উনার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ইনপুট আর দিকনির্দেশনা নিতাম। তো, খোদ ডাক্তারের চেম্বারে দীর্ঘদিন সময় কাটানোর দরুন বাংলাদেশের রোগীদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিলো। এছাড়াও পরবর্তী ৫/৬ বছর দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই হসপিটাল সিস্টেম ডেভেলপ, সাপোর্ট দিতে গিয়ে আরো অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি- এই দেশে অল্প কিছু খারাপ ডাক্তারের পাশাপাশি অনেক ভালো ডাক্তার আছে। আর আছে অসংখ্য বিবেকহীন মূর্খ রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজন।
ঢাকার কয়েকটা দামী হাসপাতাল বাদ দিলে, বাংলাদেশের বেশির ভাগ হাসপাতাল/ক্লিনিকের রোগীদের ভেতরে শতকরা ৯০ ভাগ রোগী এবং রোগীর আত্মীয় স্বজনরা ডাক্তারদের সাথে অন্যায় ভাবে খারাপ ব্যবহার করে। আর ডাক্তাররা যে কতটা ধৈর্য নিয়ে রোগী ও রোগীদের আত্মীয় স্বজনদের অত্যাচার/খারাপ ব্যবহার সহ্য করে, বলার মত না। সামান্য ২০০-৫০০ টাকা ভিজিট দিয়ে বেশির ভাগ মানুষই ভাবে ডাক্তার সাহেবকে তিনি কিনে ফেলেছেন। সবচাইতে বিরক্তিকর ব্যপার হচ্ছে ডাক্তারদের উপরে ডাক্তারী। অনেক রোগী দেখেছি, যাদের আসলেই কোন সমস্যা ছিলো না। ডাক্তার তাদেরকে সেটা বললে তারা চেম্বার থেকে অর্ধেক বের হয়েই ডাক্তারকে গালাগালি শুরু করতো আর বলতো- 'এই ডাক্তার ভালা না, অমুক ডাক্তারের কাছে যাইতে হইবো'। এটা নাকি বেশ কমন ঘটনা... তাই ডাক্তাররা বাধ্য হয়েই অনেক রোগীকে ফলস ঔষধ দিয়ে থাকে (যেটা আসলে কোন ঔষধই না)। অনেক ক্ষেত্রে একজন ডাক্তার ভালো মানুষ হওয়ার পরেও খামোখাই নানারকম টেস্ট দিতে বাধ্য হয়, নয়তো রোগীর লোকজন ভাবে এই ডাক্তার কিছু জানে না।
সবচাইতে খারাপ ব্যপার হচ্ছে- ডাক্তারদের সঠিক চিকিৎসার পরেও কোন রোগী মারা যাওয়ার পর আত্মীয় স্বজনদের ভুল চিকিৎসার অপবাদ দেয়া। এই সমস্যাটা ঢাকার অনেক নামীদামী হাসপাতালে অনেক শিক্ষিত ও উচ্চবিত্তদের ভেতরেও দেখেছি। বেশ কয়েকবার আমার সামনেই রোগীর প্রভাবশালী আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতাল ভাংচুর করেছে।
অনেক সময় এরকম হয় যে- রোগীর বাঁচার আশা খুবই ক্ষীণ! স্পেশাল কিছু ট্রিটমেন্ট আছে যেটা দিলে বাঁচতেও পারে, আবার নাও পারে। ডাক্তাররা দ্রুত সেই ট্রিটমেন্ট দিয়ে ফেলেন। এতে কেউ কেউ বেঁচে যায়, অনেকেই মারা যায়। কিন্তু রোগীর আত্মীয় স্বজনদের বেশির ভাগই এই ব্যপারটা বুঝতে চায় না, তারা হাসপাতাল আর ডাক্তারদের দায়ী করে বসে। কয়েকদিন আগে গাজীপুরো এরকম একটা ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ডাক্তার আর ওয়ার্ড বয়কে পুলিশ দিয়েই ধরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেছে রোগীর প্রভাবশালী আত্মীয়। ওখানে যে ট্রিটমেন্টটা দেয়া হয়েছিলো সেটা নিয়ে বেশ কয়েকজন ডাক্তার বন্ধুর সাথে কথা বললাম। সকলেই বললেন- ট্রিটমেন্ট ভুল ছিলো না।
রোগীর আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতাল ভাংচুর বা অন্য কোন ক্ষতি করলে সেটা হাসপাতাল মালিকরা পুষিয়ে নিতে পারে। কিন্তু যদি সরাসরি এর জন্য ডাক্তারদের এভাবে হয়রানী করা হয় সেটা খুব দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ব্যপার। একই সাথে ভবিষ্যতে রোগীদেরও এর ফল পেতে হবে। কারণ, এরকম ঘটনার ফলে কোন ডাক্তার আর ওধরনের লাইফ সেভিং রিস্ক নিতে যাবে না। ফলশ্রুতিতে, আপনার আমার আত্মীয় স্বজনদের ভেতরে যারা এরকম জীবন-মরনের মাঝখানে পড়ে যাবে, তাদের বেঁচে ফেলার হার শূন্যে নেমে আসবে।
সুতরাং ঐ অন্যায় গ্রেফতারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন বন্ধুগন। ডাক্তারদের প্রতি সহানুভূতি না থাকলেও, নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে হলেও করুন।
দেশের জন্য দেয়া একটা ফেসবুক স্টেটাস শুধু একটা ফেসবুক স্টেটাস না, একটা ধাক্কা। এরকম মিলিয়ন মিলিয়ন ধাক্কাতেই একদিন আমরা পাহাড় সরিয়ে দেব, দেশের মানুষকে বদলে দেব, দেশ বদলাবে। একটা সচেতনতামূলক ফেসবুক স্টেটাসকে এত ছোট করে দেখার কিছু নাই।