ফ্রেন্ডশীপ

বন্ধুত্ব বিষয়ক বিভিন্ন পর্যবেক্ষন, ভাবনা ও উপলদ্ধি

খেয়াল করে দেখেন, স্কুল লাইফের পরে বন্ধু পাওয়া কত কঠিন! বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বার্থ চিন্তা বাড়ার ফলে এটা ঘটে। প্রফিট না দেখলে যে সমাজে বন্ধু বানায় না অধিকাংশ লোক, সেখানে আপনি একা নিঃস্বার্থ হয়েও বন্ধু পাবেন না।

যার সাথে আপনার ইগো যত কম কাজ করবে তার সাথে বন্ধুত্ব তত গাঢ় হবে। একদম ইগোলেস ফ্রেন্ডশীপ যার সাথে, সে আপনার সোলমেট।

যাদের ভেতরে হিংসা আছে আপনি চাইলেও তাদেরকে আপন ভাবতে পারবেন না।

বন্ধুত্ব - ২২

এখন মানুশ কোনকিছু পাওয়ার জন্য বন্ধুত্ব করে। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব না মিললে বন্ধুত্ব রাখে না আর। তারপর, একদিন যখন জাগতিক চাওয়া-পাওয়া কমে আসে, যখন সত্যিকার অর্থে আরেকজন মানুশকে পাশে চায়, কাউকেই খুঁজে পায় না।
এই একাকিত্ব তার নিজের অর্জন। বন্ধুত্ব সম্পর্কে অজ্ঞতার ফল।

চালাকি করার চেষ্টা করে মূলত বোকা মানুশেরা। তারা ভাবে চালাকি করে তারা খুব জিতসে। আসলে ঠকে। কোন কোন দিক থেকে ঠকে সেটা বুঝার মত বুদ্ধি তাদের নেই। তাদের সবচাইতে বড় নির্বুদ্ধিতা হচ্ছে- তারা ভাবে অন্যরা তাদের চালাকি ধরতে পারে নাই।

সহজ জীবন - ১৯

ভালো থাকা সহজ। ভালো থাকার জন্য আপনার লাগবে-

১) ফ্যামিলির সদস্যদের সাথে ভালো সম্পর্ক।
২) ভালো কিছু বন্ধু-বান্ধব।
৩) পুষ্টিকর খাবার।
৪) সুস্থ্য বিনোদন।
৫) জীবিকার জন্য কিছু স্কিল/দক্ষতা।
৬) মানুশের জন্য কিছু করার মানসিকতা।

আর এসব বিষয় নিশ্চিত করার জন্য আপনার লাগবে জ্ঞান। ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ বুঝার ক্ষমতা তৈরি হওয়ার জন্য জ্ঞান লাগে। জ্ঞান ছাড়া বোধ-বুদ্ধির উন্নয়ন ঘটে না। ফ্যামিলি ও আপনার পরিবেশ থেকে যদি এগুলো অর্জন করতে পারেন তাহলে সবচাইতে ভালো। অথবা বাইরে থেকেও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে এর সন্ধানে থাকতে হবে। জানার আগ্রহ থাকতে হবে। জ্ঞানী কারো শিষ্য হওয়া সবচাইতে সহজ উপায়। তবে, অন্ধভাবে অনুকরণ করবেন না। চিন্তা করা শিখতে হবে। চিন্তা না করলে জ্ঞান অর্জন সম্ভব না।

আপনি যত বেশী জ্ঞানী হবেন, অন্যের সাথে মিলেমিশে থাকার ক্ষমতা ততই বৃদ্ধি পাবে। কিভাবে ভালো বন্ধু বানানো যায়, কিভাবে মানুশের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়, এসব জানা থাকা লাগে। হিউম্যান ট্রেইটগুলো নিয়ে স্টাডি করতে পারেন নিজের ভেতরে থাকা খারাপ ট্রেইটগুলো সনাক্ত করে দূর করার জন্য। সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে সমাজে প্রচলিত ধ্যান-ধারণাগুলোর উপরে খুব বেশী বিশ্বাস রাখবেন না। এই যেমন, আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে- 'ভালো মানুশেরা একটু রাগী হয়ে থাকে'। এইসব ফালতু ধারণা থেকে নিজেকে বের করে আনতে হবে। আপনার চারপাশের ৯৯% মানুশও যদি ভুল জিনিষে বিশ্বাস করে আপনি সেটা না করে যেটা সঠিক মনে হচ্ছে সেই ১% এ থাকুন। তবে, রিজিড হবেন না। আপনার ঐ ১% ভুলও হতে পারে। মূল বিষয় হচ্ছে ভুলের থিওরীতে আটকে না থাকা। তাহলে আপনার কমিউনিকেশন স্কিল বাড়বে, বন্ধু বাড়বে।

পুষ্টিকর খাবার খুব গুরুত্বপূর্ন। আর সেটাও তখনি নিশ্চিত হবে যখন আপনি ব্যালেন্স ডায়েট সম্পর্কে জানতে পারবেন। কখন কী খেতে হবে, কিভাবে খেতে হবে, কখন না খেয়ে থাকতে হবে, এসব জ্ঞান অর্জন করা খুব কঠিন কিছু না। চাইলেই জেনে নিতে পারেন। জানার কোন বিকল্প নাই।

সুস্থ্য বিনোদন অনেক গুরুত্বপূর্ন। কারণ, আপনি যদি মানুশের দুঃখ দেখে আনন্দ পান তাহলে বন্ধুহীন হয়ে যাবেন। কুৎসা রটিয়ে, সমালোচনা করে, অন্যের ক্ষতি করে যদি আপনাকে বিনোদন নিতে হয় তাহলে আপনি একসময় একা হয়ে যাবেন। অন্যকে খোঁচা দিতে, 'উচিৎ কথা' নামক অসুস্থ চর্চা করতে যদি আপনার খুব ভালো লাগে, তাহলে নিশ্চিত থাকেন আপনাকে কেউ পছন্দ করবে না। অন্যের ভালো দেখে যদি আপনার ভেতরে হিংসা হয়, তাহলে আপনি বন্ধুহীন হয়ে যাবেন। মানুশ কিন্তু এই হিংসাটা টের পায়। যার ভালো কিছু শুনে আপনি একবার হিংসা অনুভব করেছেন, সে আপনাকে আর কখনোই বিশ্বাস করবে না।

অসুস্থ বিনোদন আপনাকে সাময়িক আনন্দ দিলেও এরকম সকল অসুস্থ বিনোদন আপনাকে ধীরে ধীরে অসুখী মানুশে পরিনত করবে। তাই, কোনটা সুস্থ্য বিনোদন আর কোনটা অসুস্থ বিনোদন, এই জ্ঞান ও বোধ আপনার থাকা লাগবে।

আপনি যদি নিজের জীবিকা নিজে উপার্জন করতে না পারেন, তাহলে পরনির্ভরশীল হয়ে যাবেন। পরনির্ভরশীল মানুশ কখনোই ভালো থাকতে পারে না। আর জীবিকার জন্য আপনার লাগবে স্কিল/দক্ষতা। এসব দক্ষতা অর্জনের জন্য জ্ঞান। শুধু পরিশ্রম দিয়ে এসব হয় না। খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন, স্বল্প আয়ের লোকজন কত পরিশ্রম করে। তাদের সমস্যা একটাই, জ্ঞানের অভাব। জ্ঞানের কোন বিকল্প নেই এখানে।

মানুশের জন্য কিছু করার যে ভালো, এটা বুঝার একমাত্র উপায় হচ্ছে জ্ঞানী হওয়া। এটা কিভাবে ভালো তা ভাষায় প্রকাশ করে বুঝানো সম্ভব না। আপনি যত জ্ঞানী হতে থাকবেন ততই বিষয়টা পরিষ্কার হতে থাকবে।

সুতরাং দেখতেই পাচ্ছেন, ভালো থাকার জন্য আসলে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে জ্ঞান। জ্ঞান অর্জন করুন, ভালো থাকুন।

"বিপদের সময় সাহায্য না করলে বন্ধু না", এটা একটা বস্তুবাদী ধারণা। মানে, বন্ধু বানানো হইলো কিছু পাওয়ার জন্য। কর্পোরেট বন্ধুত্ব।

কিছু পাওয়ার আশায় যে সম্পর্ক বানানো হয় সেইটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক না, ব্যবসার সম্পর্ক বা ঐক্যজোটিয় ব্যাপার। ব্যবসা খারাপ না। ঐক্যজোটও ভালো। কিন্তু কিছু পাওয়ার আশায় বা বিপদে সাহায্যের আশায় বন্ধুত্বের নামে সম্পর্ক না বানিয়ে ব্যবসা বা alliance নামে বানানোই ভালো। তাতে আপনার ব্যবসা ভালো হবে।

এক্সপেক্টেশন যত কম রাখতে পারবেন, বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক তত ভালো ও টেকসই হবে।

ত্রিভুজ
৭ আগস্ট, ২০১৬

সহজ জীবন - ১৩

জগতের বেশীরভাগ মানুষই মনে করে — যখন আমার অনেক টাকা হবে, অনেক ক্ষমতা হবে, অনেক লোক আমার চারপাশে ঘুরঘুর করবে তখন আমি অনেক সুখী হবো। মানসিক শান্তির ব্যপারটা আসলে এরকম না। যখন আপনি বুঝতে পারবেন ঐ লোকগুলো শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থের জন্য আপনার চারপাশি ঘুরছে, তখন সেটা আপনাকে শান্তি দিবে না। আপনার আসলে দরকার নিখাঁদ ভালোবাসা। এরা আপনাকে ভালোবাসে না। এরা আপনার টাকা ও ক্ষমতাকে ভালোবাসে মাত্র।

আপনার যখন কিছুই ছিলো না তখন যে আপনার চারপাশে ঘুরঘুর করতো, সে-ই সত্যিকার অর্থেই আপনাকে ভালোবাসে। আর এই ভালোবাসাই আপনার দরকার।

জনৈক কবি বলেছেন

Are you your best friend's best friend?

বর্তমান সভ্যতায় চালাক-চতুর হওয়াটা পজেটিভ ব্যপার হিসেবে দেখা হলেও এটা আসলে নেগেটিভ ট্রেইট। দিন শেষে চালাক-চতুররা লাভবান হয় না। তাদের সবচাইতে বড় লস হচ্ছে তাদের কোন কাছের মানুষ থাকে না। সত্যিকার বন্ধু থাকে না।

চালাক আর বুদ্ধিমান হওয়ার ভেতরে পার্থক্য আছে।
Be intelligent, not clever!

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি