এদেশে ডাক্তারদেরকে পাবলিক খুব অন্যায়ভাবে ব্লেইম করে। প্রতিষ্ঠানের সমস্যায় ডাক্তারদের শাস্তি দেয়া হয়। এর ফলাফল কী হবে জানেন? এদেশের ভালো ভালো ডাক্তাররা মন খারাপ করে দেশ ছেড়ে চলে যাবে।
করোনাতে পুরো পৃথিবীতেই প্রচুর ডাক্তার মারা যাচ্ছে। এতে প্রায় সকল দেশেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের একটা সংকট তৈরি হচ্ছে। দেশের বড় বড় ডাক্তাররা চাইলেই ভালো স্যালারিতে ওসব দেশে মাইগ্রেট করতে পারবে। আপনার অন্যায় আচরণের ফলে এদেশের ভালো ডাক্তাররা হতাশ হয়ে যদি দেশ ছেড়ে চলে যায়, শেষ পর্যন্ত বিপদে পড়বেন আপনি নিজেই। সুতরাং... সময় থাকতে সাবধান! আপনার নিজের স্বার্থেই!!
বাংলাদেশের অধিকাংশ লেখক পাঠকের সাথে চালাকি করার চেষ্টা করে। তারা ইনিয়ে বিনিয়ে তাদের নিজেদের ধ্যান-ধারণা-মতবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। এই চালাকির কারণে পাঠক তাদের পছন্দ করে না। হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তার অন্যতম বড় কারণ ছিলো এইরকম চালাকি চেষ্টা না থাকা। চালাকি কেউই পছন্দ করে না। বিশেষ করে, পাবলিকের নিজস্ব ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে হলে তো একদমই না।
ওয়েল, কচুরীপানা খাওয়া নিয়া যতই হাসাহাসি করেন না কেন, এটা যদি খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায় তাহলে বেশ ভালো একটা ব্যপার হবে। মন্ত্রীসাহেব এই বিষয়ে কী বলেছেন সেই ভিডিও দেখলাম। উনার ইনটেনশন আমার কাছে বেশ পজেটিভ লাগলো। কচুরীপানার খাদ্যমান নিয়ে কৃষি গবেষনার প্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণা হওয়া উচিত।
Idiocracy নামে একটা মুভি আছে। ওখানে দেখায় ভবিষ্যতে মানুষ কতটা স্টুপিড হয়ে যেতে পারে। মুভিটা কমেডি ক্যাটাগরির। কিন্তু বাস্তবতা যদি আপনি দেখেন, তাহলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের ওরকম স্টুপিড হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা একেবারে কম না। বিশেষ করে ঢাকাবাসীদের সেই সম্ভবনা অনেক বেশী। ঢাকার বাতাস বিপদসীমার পাঁচগুন বেশী দূষিত। দেশের প্রথম সারির দু'টো ভার্সিটিই প্রচন্ড দূষিত এলাকায় অবস্থিত, যেখানকার বাতাসে হেভী মেটালের পরিমান অনেক বেশী যা তাদের ব্রেইন ড্যামেজ করে দিচ্ছে।
আমাদের লাইফ স্টাইলের কারণেও আমাদের ব্রেইন ড্যামেজ হয়ে দিনে দিনে স্টুপিড হয়ে যাচ্ছি। জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে মানুষ যেভাবে ব্রেইন ড্যামেজ করছে তার ভেতরে অন্যতাম আটটা কারণ হচ্ছে-
১) অতিরিক্ত স্ট্রেস
২) পরিবেশ দূষণ
৩) সকালে নাস্তা না করা
৪) ঠিকমত না ঘুমানো (বিশেষ করে রাত জাগা)
৫) অতিরিক্ত খাওয়া
৬) ধূমপান / স্মোকিং
৭) পর্যাপ্ত পানি পান না করা
৮) প্রচুর চিনি ও চিনি জাতীয় খাবার খাওয়া
কয়টা কমন পড়লো আপনার সাথে? ঢাকাবাসী প্রজন্মের ভেতরে প্রথম দুইটা অলমোস্ট সবারই কমন সম্ভবত। আমাদের এক্সট্রিমলি ফালতু এডুকেশন সিস্টেম আর শব্দ ও বায়ূ দূষণের কারণে।
দু'টো বড় বিপদ আমাদের দিকে এগিয়ে আসতেছে—
১) আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স আর টোটাল অটোমেশনের ফলে স্বস্তা গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে। পশ্চিমারা তখন নিজেরাই গার্মেন্টস সেটাপ করে ফেলবে। চীন এর ভেতরে এই দিকে জোরেশোরে আগাচ্ছে। গার্মেন্টস আমাদের অর্থনীতির অনেক বড় জায়গাজুড়ে আছে। এই জায়গাটা হারালে আমাদের অবস্থা ভেনিজুয়েলার মত হয়ে যাবে।
২) আমাদেরকে মাঝারি উন্নত দেশ ঘোষণা দিয়ে গরীব দেশ হিসেবে যেসব বানিজ্যিক সুবিধা আমরা পেতাম, সেগুলো সব বন্ধ করে দেয়া হবে। আমরা যদি সত্যিই উন্নত হয়ে যেতাম, তাহলে সমস্যা ছিলো না। সমস্যা হলো, আমরা উন্নয়নটা হচ্ছে একটা বাবল। এটা যেকোনদিন বার্স্ট করবে। তারপর পরিস্থিতি কোথায় যাবে, কল্পনা করাও কষ্টকর!
ব্যাংকিং সেক্টর ও অন্যসব সেক্টরের আলাপ বাদই দিলাম। তো, এসব বিপদের মুখে আমাদের প্রস্তুতি কী?
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা হচ্ছে সার্টিফিকেট নির্ভর। জ্ঞান অর্জিত হোক বা না হোক, সার্টিফিকেট থাকলেই আপনাকে শিক্ষিত ধরে নেয়া হবে। পিএইচডির বেলায়ও তা-ই ঘটছে। কোনরকমে একটা PhD করে ফেলতে পারলে এই সার্টিফিকেট ভাঙিয়ে আপনি সারাজীবন খেতে পারবেন।
পিএইচডি করা মানে হইতেছে গবেষণা করতে শেখা। এরপর যদি কেউ গবেষণা না করে, তাহলে এই PhD তার কিংবা দেশের কোন কাজে আসলো না।
এই দেশে পিএইচডি করে নামের পেছনে ডক্টরেট লাগানো লোকগুলো সারা জীবনে কয়টা থিসিস করছে, কয়টা পেপার্স পাবলিশ করছে, একটু খোঁজ নিয়ে দেইখেন। এদের কোন প্যাটেন্ট তো হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাবেন না।
এক পরিচিতের বাসায় গিয়েছি। দেখলাম একটা ৪/৫ বছরের বাচ্চাকে তার মা শলার ঝাড়ু দিয়ে বাড়ি দেয়ার ভয় দেখাচ্ছে, জোরে বিছনায় একটা বাড়িও দিলো। বাচ্চাটা ভয়ে কেঁপে উঠলো। ঐ মহিলা যদি জানতো, এটা কতটা ভয়াবহ একটা ব্যপার তাহলে এই কাজ কখনোই করতো না। বাচ্চাটার চেহারা দেখেই তার অনুভূতি বোঝা যাচ্ছিলো। কিন্তু ভেতরে যে তারচাইতেও ভয়াবহ ব্যপার ঘটছে, সেটা আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে খুব ভালো জানি। ছোটবেলা আমাকে একবার ঝাড়ু দিয়ে ভয়াবহভাবে মারা হয়েছিলো। সেই ট্রমা আমার এখনো কাটে নাই।
এদেশের দু'টো জিনিষের জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন। ১) শিক্ষা ব্যবস্থা, ২) প্যারেন্টিং। এই দু'টো ব্যপার ঠিক না করলে একটা সুস্থ জাতি আপনি কোনভাবেই আশা করতে পারেন না।
বাঙালি খুব বিচিত্র। তাদের মোবাইলের বাজেট হইলো ৫ হাজার কিন্তু কোয়ালিটি খোঁজে আইফোনের। ডাক্তাররে ফি দিবো ৫০০ টাকা কিন্তু সার্ভিস চাইবো আম্রিকান। পকেটে আছে দশ হাজার, বানাইতে চায় আমাজন+গুগল+ফেসবুক।
এই দ্যাশে আপনে ব্যবসা করবেন কেমনে?
গতবছর আমি সোন্দরবন গেছিলাম। দেইখা আইছি, বাগ হরিনেরা অন্ধকারে কত কষ্ট কইরা জীবনাতিপাত করতেছে। বিদ্যুৎ নাই, তাই তাদের কোন স্মার্ট ফোনও নাই। কেমন আনস্মার্ট জীবনযাপন তারা করতেছে, ভাবতে পারেন? সর্কার রামপাল কইরা তাদের এই দুঃখ দূর করার চেষ্টা করতেছে, সেইটা কিছু লোকের সহ্য হয় না।
রামপাল কে হ্যাঁ বলুন।
১.
এই দেশের মানুষকে নিয়ে সবসময়ই আমি আশাবাদী। অনলাইনে বিভিন্ন সময়ে বই পড়া বিষয়ক বিভিন্ন একটিভিটিস ও দেশের জন্য কিছু করতে চাইলে লোকজনের একাত্মতা দেখে মুগ্ধতার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আশাবাদ।
২.
ছোটবেলা থেকেই পাঠ্য বইয়ের বাইরে পড়ার অভ্যাস। বিশেষ করে পত্রিকার কলাম পড়তাম স্কুল জীবন থেকেই। দেশকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি তখনই। বাংলাদেশকে নিয়ে হয়েছি আশাবাদী। তখন থেকেই ভেবেছি, কেবল নিজের জন্য নয়, দেশের জন্যও করার আছে, অনেক কিছু।
দেশকে নিয়ে এই আশাবাদ ও ভাবনা কেন? কারণ, আমি এই এলাকার মানুষদের জানি। দেখেছি, কি পরিমান ট্যালেন্ট এই দেশের মানুষ। শুধুমাত্র একটু দিকনির্দেশনার অভাবে আমরা পিছিয়ে আছি। শুধুমাত্র আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটার কারণে আমাদের আজকের এই দুর্দশা। এটা কাটানো সম্ভব। এর জন্য কাজ করতে হবে। অনেকে কাজ করছেনও... আরো বেশী মানুষকে নামাতে হবে এই কাজে।
আজকে পৃথিবী যেভাবে স্বর্ণের খনি আর হীরার খনির জন্য ছুটছে, একসময় মানুষের খনির পেছনে ছুটবে। উন্নত দেশগুলো সব মানুষ শূন্য হয়ে পড়ছে দিনে দিনে। দক্ষ লোকের জন্য এখনি বিশ্বের অনেক দেশ তাদের ইমিগ্রেশন পলিসি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে এমন দিনও আসবে যখন বাংলাদেশের রাস্তার মোড়ে মোড়ে ফ্লেক্সি লোডের দোকানের চাইতে বিদেশে লোক পাঠানো এজিন্সির সংখ্যা বেশী হবে। তবে, তারা খুঁজবে দক্ষ ও যোগ্য লোক।
তাছাড়া নিজেদের দেশকে সমৃদ্ধ করার জন্যও অনেক যোগ্য লোক দরকার আমাদের। এই যোগ্যতা অর্জিত হতে পারে নিবিড় পাঠ ও অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে।
ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ নানামুখি অধ্যয়ন এবং সন্মিলিত মৌলিক পাঠ ও গবেষণার উদ্যোগ হিসাবে যাত্রা শুরু হলো 'পাঠশালা - Centre for Basic Studies'-এর।
আপনি যদি মনে করেন কিছু শেখাতে পারবেন চলে আসুন। কিছু শিখতে চাইলেও। এখানে আমরা শিখবো ও শেখাবো।
যে কেউ সদস্য হতে পারবেন। তবে তিনি জানতে ও জানাতে কতটা আগ্রহী তা বিবেচনায় নেওয়া হবে।
বই নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনা হবে শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ, উন্নয়ন ভাবনাসহ নানান প্রসঙ্গ নিয়ে। চলচ্চিত্র, নাটক, চিত্রকলা, সঙ্গীত নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
খ্যাতিমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিদের জীবন ও ভাবনা নিয়ে আলোচনা ও বিশ্লেষণ হতে পারে। আলোচনা হতে পারে সাম্প্রতিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ নিয়েও।
আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে আগামী দিনের বাংলাদেশের জন্য যোগ্য, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির প্রচেষ্টা চালানো।
আশা করি এই উদ্যোগে স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে সবার।
আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলবো শক্তিশালী বাংলাদেশ।
সবাইকে ধন্যবাদ।