বাংলাদেশ

ভালো বাংলা সফটওয়্যারের অনেক অভাব। গত দশ/পনের বছরে অনেকেই একটা ভালো বাংলা ডিকশনারী আর বাংলা স্পেল চেকার বানানোর অনুরোধ করেছেন। এত টেকনোলজিস্ট চারদিকে, কিন্তু ভালো কোন বাংলা সফটওয়্যার কেন নাই বলেন তো? কারণ একটাই। এদেশের মানুশ টাকা খরচ করে এসব সফটওয়্যার কিনবে না। এর জন্য দায়ী পাইরেটেড উইন্ডোজ/অফিস ও ফ্রি বাংলা টাইপিং সফটওয়্যারের প্রচলন। ফলে, ৫০০/১০০০ টাকা খরচ করে একটা সফটওয়্যার কেনার মত দুই/তিন হাজার পাবলিক খুঁজে পাওয়াও কঠিন এদেশে।

ধরেন একটা বাংলা ডিকশনারী প্রজেক্ট শুরু করলাম। গতানুগতিক ডিকশনারী না হয়ে যদি একটু ইনোভেটিভ ও ইনফরমেটিভ কিছু করতে যাই, ডাটা এন্ট্রি করতেই খরচ আছে ৭-৮ লাখ টাকা। সফটওয়্যার না হয় ফ্রি বানিয়ে দিলাম, কিন্তু ডাটা এন্ট্রি এবং লজিস্টিক খরচ কে বহন করবে? স্পেলচেকার প্রজেক্টে তো আরো বেশী বাজেট দরকার।

যতদিন আপনারা শুধু ফ্রি খুঁজতে থাকবেন ততদিন বাংলায় ভালো কিছু আসবে না।

কিছুদিন আগে ফেসবুকে বুদ্ধিজীবি নিয়া অনেক কাহিনী হলো। তখন একজনরে বলতেছিলাম— যে দেশে প্রায় ৫০০ দিন টানা স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও সেটা নিয়ে খুব বেশী লোকরে চিন্তিত হতে দেখা যায় না, সেই দেশে বুদ্ধিজীবি খুঁজে লাভ নাই।

আজকে তিনি ম্যাসেজ দিয়ে বললো- আফগানিস্থানের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়াও তারা সবাই পেরেশান, আর আপনি বলেন কেউ চিন্তিত না!

বুঝলাম, ভঙ্গুর আফগানিস্থানে আমাদের কী রপ্তানী করতে হবে!

চাঁদপুরে আমার দাদা বাড়িতে কাচারি ঘর নামে একটা ঘর ছিলো যেখানে মুসারফিররা থাকতো। তাদের থাকা-খাওয়া, সুবিধা-অসুবিধা বাড়ির লোকরা দেখতো। এই কালচার এখন আর নেই কোথাও।

বাংলাদেশে প্রতি ১৩ লাখ ৫৫ হাজার লোকের জন্য একটা ভার্সিটি আর আফগানিস্থানে চার লক্ষ তেতাল্লিশ হাজারের জন্য একটা। বাংলাদেশে ৫৫০ দিনের বেশী সময় ধরে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আর আফগানিস্থানে এই যুদ্ধাবস্থায়ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অধঃপতন কোন অবস্থায় আছে সেটা বড় বড় কোম্পানীগুলোতে বিদেশীদের (বিশেষ করে ভারতীয়দের) নিয়োগ দেখলেই বুঝতে পারবেন।

এরকম একটা অবস্থায় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়া কথা না বলে আফগানিস্থান নিয়া কথা বলাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

ছয়টি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ১৯ মাসে ৩ হাজার ৩১৩ জন ব্যাংকার চাকরি ছেড়েছেন। দু’টি বেসরকারি ব্যাংক থেকে থেকে চাকরি ছেড়েছেন ২ হাজার ৩০৯ জন। বাকি ১ হাজার ৪ জন চাকরি ছেড়েছেন অন্য চারটি ব্যাংক থেকে।
২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৯ আগস্ট পর্যন্ত ১৯ মাস ৯দিনে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক থেকে এসব কর্মী চাকরি ছেড়েছেন।

তথ্যসূত্রঃ ইনকিলাব, বাংলানিউজ২৪ ও বাংলা.রিপোর্ট

উত্তরার অধিকাংশ এক্সপেন্সিভ ফ্ল্যাটগুলো খালি হয়ে গিয়েছে কারণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বড় বড় পোস্টে জব করা লোকজন ওগুলোতে থাকতো। অন্য এলাকার কী অবস্থা জানি না। এমনিতে বিভিন্ন সূত্রে জব হারানোর যেসব পরিসংখ্যান জানি, সেগুলোও ভয়াবহ! বিশেষ করে উচ্চ বেতনের লোকজনের জব বেশী গিয়েছে শুনেছি, দেখছি।

ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের অধিকাংশেরই খুব খারাপ অবস্থা। কতগুলো পরিচিত বড় রেস্টুরেন্ট বন্ধ হতে দেখলাম। আরো বিভিন্ন সেক্টরে নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছে গত দেড় বছরে। এগুলোর সাথে জড়িত বহু লোক জব হারিয়েছে।

পর্যটন সেবা ও বেসরকারী স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের অবস্থা তো আরো খারাপ। সংবাদপত্রগুলো সব বন্ধের পথে আছে। হাজার হাজার মিডিয়াকর্মীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত।

এরকম একটা খারাপ সময়েও যদি পাবলিক রেস্পন্সিবল না হয়ে ফেসবুকে আজাইরা বিষয় নিয়ে মেতে থাকে, তখন তাদের দুর্দশা কে ঠেকাবে?

ফ্যান খুলে পড়ার বেশ কয়েকটা ঘটনা দেখলাম গত এক মাসে। আমার বাসায় সিলিং ফ্যানের সিকিউরিটির জন্য একটা এক্সট্রা তার আছে যেটা দিয়ে ফ্যান লক করে রাখা হয়। কিন্তু, যদি ফ্যান স্ট্যান্ড ভেঙ্গে পড়ে যায়, তাহলে তো কিছু করার নেই। কি পরিমান বাজে ম্যাটেরিয়াল দিয়ে ফ্যান তৈরি হলে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে!

এসব কেন ঘটছে? ফ্যান কোম্পানীগুলোর মান নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব কাদের? যেসব কোম্পানীর ফ্যান এভাবে ভেঙ্গে পড়ছে, সেসব কোম্পানীর বিরুদ্ধে কি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করার উপায় আছে?

এসব ঘটতে থাকলে আপনি আমি কেউই নিরাপদ নই। এমনকি এই পোস্টটা লিখে পোস্ট করার আগেও তো আমার ফ্যানটা খুলে মাথার উপরে পড়তে পারে।

ছবিঃ অসীম পিয়াস-এর টাইমলাইন থেকে নেয়া।

[image]

বাংলাদেশের শিক্ষা-ব্যবস্থার একটা মৌলিক সমস্যা হচ্ছে মুখস্ত বিদ্যা। এই মুখস্ত বিদ্যা থেকে বের হয়ে আসার প্রথম ধাপ হচ্ছে বিসিএস এক্সামকে মুখস্ত-বিদ্যা মুক্ত করা।

দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে। স্বল্প আয়ের লোকজন বাজার থেকে কিনতে পারছে না প্রয়োজনীয় খাবার। এরকম একটা অবস্থায় যদি আপনি ব্যালেন্স ডায়েট নিয়ে একটু স্টাডি করেন এবং আপনার জন্য যতটুকু যা দরকার গ্রহণ করেন, তাহলে আপনি যেমন অল্প খরচে ভালো থাকতে পারবেন অন্যের জন্যও ভালো হবে।

ব্যালেন্স ডায়েট সম্পর্কে আপনি যত জানবেন আপনার প্রতিদিনের খাবার খরচ তত বাঁচবে। কারণ, যেটুকু আপনার শরীরের জন্য দরকার, তার বেশী খেয়ে লাভ নেই বরং এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

তাই ব্যালেন্স ডায়েট সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। তালিকা করে ফেলেন প্রতিদিন আপনার কতটুকু কী প্রয়োজন।

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের প্রতিদিন কী কী উপাদান লাগে, তার একটা তালিকা দিলাম।

ইউটিউবের আইডিয়া আসে জাওয়েদ করিম নামের এক বাংলাদেশীর মাথায়। তারপর তিনি আরো দুইজনকে সাথে নিয়ে ইউটিউব প্রতিষ্ঠা করেন। খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সালমান খানও বাংলাদেশী। একাডেমিক ক্ষেত্রেও অনেক বড় বড় ফিগার পাবেন বাংলাদেশী। এদের সবার ভেতরে একটা কমন ব্যাপার হচ্ছে, এরা কেউই বাংলাদেশে বড় হয়নি, বাংলাদেশে পড়াশোনা করেনি।

জাতি হিসেবে বাংলাদেশীরা মেধাবী। এটা শুধুমাত্র আমার পর্যবেক্ষন না, অনেক বড় বড় মানুশের পর্যবেক্ষনও। কিন্তু এই মেধাবীরা এদেশে থাকলে কিছু করতে পারে না।

কেন?

আমি এর তিনটা কারণ খুঁজে পেয়েছি।
১) ব্যাড প্যারেন্টিং
২) ব্যাড এডুকেশন সিস্টেম
৩) ব্যাড এনভায়রমেন্ট / বাজে পরিবেশ

ব্যাড প্যারেন্টিং ও ব্যাড এডুকেশন সিস্টেম নিয়ে তো আগে অনেকবার বলেছি। আজকে এই বাজে পরিবেশটা নিয়ে কয়েকটা পয়েন্ট বলি-

  • আপনি দেখবেন, আমাদের এখানে অধিকাংশ পাবলিক এন্টারটেইনমেন্টের পেছনে প্রচুর সময় দেয়। এন্টারটেইনমেন্ট গুরুত্বপূর্ন, কিন্তু এর লিমিট থাকা উচিত।

  • এখানে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চারে নিরুৎসাহীত করা হয়। এদেশের বড় বড় ভার্সিটিগুলোর শিক্ষার্থীরা টিটকারির ভয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বই পড়ার কথা বলতে ভয় পায়। ফেসবুক সেলিব্রিটিরাও দেখবেন অন্যরা কেন চায়ের কাপের সাথে বইয়ের ছবি আপলোড করে, সেটা নিয়ে ট্রল করে। সেসব ট্রলে হাজার হাজার লাইক শেয়ার থাকে।

  • এদেশের ভার্সিটির ক্যাম্পাসগুলোতে পড়ালেখার পরিবেশ খারাপ। এর মাঝেও যারা একটু সিরিয়াসলি পড়তে চায়, বই-টই পড়ে, তাদেরকে সকলে মিলে টিটকারী দেয়।

  • আমাদের এখানে দেখবেন রেজাল্ট নিয়ে ব্যাপক প্রতিযোগীতা। পৃথিবীর আর কোন দেশে এরকম দেখা যায় না।

এরকম আরো অনেক পয়েন্ট আছে। এসব কারণে যারা একটু সিরিয়াস, যারা শিখতে চায়, তারা বলতে গেলে একঘরে হয়ে থাকে। এদের অধিকাংশ পরবর্তীতে দেশের বাইরে গিয়ে বেশ ভালো করে অথবা দেশে একাকিত্বের কারণে মোটিভেশন হারিয়ে ফেলে।

এখন অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা বদলাচ্ছে। ইন্টারনেটের কল্যানে নতুন প্রজন্ম বুঝতে শুরু করেছে- তারা যে পরিবেশে বাস করে এটা বিষাক্ত পরিবেশ, দুনিয়া অনেক বড়। এর থেকে বের হয়ে আসার জন্য তারা নিজেরাই ছোট ছোট কমিউনিটি তৈরি করে নিচ্ছে। এই কমিউনিটিগুলোকে স্পেস দেয়া দরকার। এদেরকে নার্সিং এর জন্য কিছু প্লাটফর্ম তৈরি করা জরুরী।

উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাওয়া ঢাকাবাসীর জন্য উত্তরা গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে সমবেদনা।

রিলিফ পাঠাবো বাহে?

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি