চিন্তা ভাবনা

অনলাইনে প্রকাশিত চিন্তা-ভাবনা সমগ্র

মানুশ কী চায়?

এই পৃথিবীতে মানুশ তার নিজের জন্য নির্দিষ্ট কিছু চায় না আসলে। এখানে তার চাওয়ার নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নেই। তাই, একটা গন্তব্য ঠিক করার পর সেখানে পৌঁছে সে হতাশ হয়। অন্য গন্তব্য খুঁজতে শুরু করে তখন। যারা ঐ একটা গন্তব্যেও পৌঁছাতে পারে না, শুধুমাত্র তারাই বলে যে তারা লাইফে ওটা চেয়েছিলো—পায় নাই।

ব্যক্তিগত জীবনে নির্দিষ্ট কোন গন্তব্যের জন্য অপেক্ষা না করে জার্নিটা উপভোগ করতে পারলে আপনার জীবন সুন্দর কাটবে।

আর নিজের গন্তব্যের দিকেই শুধু না হেঁটে অন্যরে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করা বেশী আনন্দদায়ক। কারণ, ঐ গন্তব্যে যেহেতু আপনি নিজে পৌঁছাচ্ছেন না সেহেতু হতাশ বা বোর হওয়ার কোন ব্যাপার এখানে থাকে না। ফলে, আনন্দটা হারিয়ে যায় না।

কিছু মানুশ আছে, ভ্যালিড রিজন ছাড়াও অফেন্ডেড হয়
আমি এদের থেকে দূরে থাকতে চাই
এজন্য না যে—এদের অপছন্দ করি
বরং এজন্য যে, অফেন্ড করতে চাই না
কারণ থাকুক আর না থাকুক, অফেন্ডেড হলে তো মানুশ কষ্ট পায়।

এই দূরে থাকতে চাওয়ারে অনেকে অহংকার ভাবে।
অহংকার হচ্ছে হীনমন্যতার মুখোশ,
আমার হীনমন্যতা নেই।
আমার আছে কিছু বোকামী,
যেগুলো নিতান্তই আমার নিজের।

আমি কাউকে ঘৃণাও করি না।
যথেষ্ট কারণ খুঁজে পাই না কিংবা খুঁজি না,
সময়ও হয় না আসলে।
ঘৃনা করার চাইতে ইরিলিভেন্ট করে দেয়া ভালো।

এইটা কোন কবিতা না।
কেউ আবার অফেন্ডেড হয় কিনা,
এভাবে লিখলাম তাই।
এই আরকি!

প্রতিবছর ৭ মিলিয়ন লোক এয়ার পলিউশনের কারণে মারা যায়। ৭০ লাখ লোক! প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজারের মত। গত কয়েক বছর ধরে পৃথিবীর সবচাইতে দূষিত নগরী হচ্ছে ঢাকা। ঢাকায় প্রতিদিন কতজন এয়ার পলিউশনের কারণে মারা যায়, এই ডাটা কি আমাদের কাছে আছে?

লুঙ্গি আমার পছন্দের পোশাক না। শেষ কবে পড়েছি মনেও নেই। কিন্তু লুঙ্গি পড়া অনেক লোক আমি দেখেছি। তাদের কাউকে কখনো পাবলিকের সামনে ওভাবে চুলকাতে দেখিনি। এভাবে কারো সামনে চুলকালে সেটা তো আসলেই খারাপ। কতটা রুচিহীন হলে কেউ এটা করতে পারে? বিশেষ করে একটা মেয়ের সামনে! আর কোন মেয়ে যদি এরকম রুচিহীনদের মাঝে বড় হয়ে থাকে এবং এরকম রুচিহীনদের সাথেই এখনো থাকতে বাধ্য হয়ে থাকে বা তার আশেপাশে এধরনের রুচিহীনদেরই ভীর লেগে থাকে, তার জন্য আমার আন্তরিক সমবেদনা। তবে, নিজের এই ক্ষুদ্র গন্ডি দিয়ে সমগ্র পৃথিবী বুঝলে; সেটা একটা সমস্যাই!

প্যারেন্টিং - ৩৫

আপনার বাচ্চার পড়ালেখার বিষয়ে স্কুল-কলেজের উপরে শতভাগ নির্ভর করবেন না। বিশেষ করে বাংলাদেশের শিক্ষা-ব্যবস্থা ও স্কুল-কলেজের যে অবস্থা, তাতে কোন ভাবেই আর ভরসা করা যায় না। এর সাথে যোগ হয়েছে চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের পরিবর্তন। যে ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স, তাতে বর্তমান পড়ালেখা কতটুকু কাজে লাগবে; বলা কঠিন। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নিজে পড়ানো শুরু করেন, বিভিন্ন ধরনের স্কিল ডেভেলপে সাহায্য করেন বাচ্চাদের। শুধু সার্টিফিকেট দিয়ে এখনি কিছু হয় না, ভবিষ্যতে কী হবে ভাবেন। আমরা স্কিলের যুগে প্রবেশ করছি যেখানে সার্টিফিকেটের ভূমিকা প্রবেশপত্র/টোকেনের মত হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। সার্টিফিকেটে কী লেখা আছে তার উপরে নির্ভর করে কেউ জব দিচ্ছে না। ফলে, শতভাগ ফোকাস এই দিকে নষ্ট করে ফেললে বিপদে পড়তে হবে ভবিষ্যতে।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অবশ্যই নিতে হবে, কিন্তু এটাকেই সব ভাবা যাবে না। আমি বরং বলবো প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনাটাকে অপশনাল হিসেবে নিতে। পাশাপাশি স্কিল ডেভেলপমেন্টে মূল জোর দিতে হবে। এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের যুগে কোন ধরনের স্কিল ডেভেলপ করা উচিত তা বুঝতে চোখ-কান খোলা রাখুন। বিদেশী মিডিয়া ও আপডেটেড বইপত্র পড়া শুরু করেন। আপনার নিজের ক্যারিয়ারেও এটা কাজে দিবে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিনে সার্ভাইভ করার জন্য আপনার বাচ্চার কী শেখা উচিত, কী জানা উচিত, কোন স্কিল থাকা উচিত, এই গাইডলাইন নিজেই তৈরি করার চেষ্টা করুন।

পুনশ্চঃ আমরা চেষ্টা করছি ভার্সিটয়ান থেকে এরকম একটা গাইডলাইন দাঁড় করাতে। প্যারেন্টিং বইটা লেখা শেষ হতে হতে আশা করি গাইডলাইনটা দাঁড়িয়ে যাবে অনেকটাই। চাইলে আপনিও আমাদের হেল্প করতে পারেন। অনেক লোক মিলে এই বিষয়টা নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করলে খুব দ্রুতই ভালো কিছু দাঁড় করানো সম্ভব।

বাংলাদেশে পার্সোনাল ইনকাম ট্যাক্স ৫ থেকে ২৫ পার্সেন্ট। মানে, একটা লেভেল এর ইনকামের পর আপনার প্রতি এক লাখ থেকে সরকার ২৫ হাজার টাকা নিয়ে যাচ্ছে। তখন আপনার হাতে থাকে ৭৫ হাজার টাকা। যদি ৫% ইনকাম ট্যাক্সও দেন, তাহলে ৯৫ হাজার টাকা।

এবার এই ৯৫ বা ৭৫ হাজার টাকা ব্যাংকে রাখতে যান, সরকার সেখান থেকেও কাটবে। গাড়ি কিনলে তো ১০০ থেকে ৫০০ পার্সেন্ট পর্যন্ত ট্যাক্স দিতে হয়। যাক অতদূর না যাই, সাধারনের ভেতরেই থাকি। ধরি আপনি একটা মোবাইল ফোন কিনতে গেলেন। সেখানেও সরকার ৫০% থেকে ১০০% পর্যন্ত ট্যাক্স নেয় (ইমপোর্ট করার সময়), ফলে যে মোবাইল পাশের দেশ ভারতে ২০ হাজার টাকা সেটা বাংলাদেশে বসে আপনি ৩০ থেকে ৩৫ হাজারে কিনতে হয়। তাহলে ঐ ৯৫ বা ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে আপনি একটা ফোন কিনলে সেখানে আরো ২০-৩০ হাজার টাকার মত সরকাররে দিয়ে দিলেন। আপনি এক কাপ চা, একটা বন রুটি ও কলা খেলেও সরকার সেখান থেকে ট্যাক্স নিচ্ছে। এভাবে আপনার প্রতিটা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে সরকার টাকা কেটে নিচ্ছে প্রত্যক্ষ্য ও পরোক্ষভাবে। খেয়াল করেন, আপনার ইনকাম ট্যাক্স দেয়ার পরে হাতে থাকা ৭৫ হাজার থেকে নিচ্ছে এই টাকা।

ভালো করে হিসাব করলে দেখবেন আপনার উপার্জনের অর্ধেকরও বেশী টাকা নিয়ে নিচ্ছে সরকার । এই টাকা তো জনগনের। তাই, দেশ ও জনগনের জন্য যেটা সবচাইতে ভালো, সেখানেই সবচাইতে বেশী খরচ করা উচিত। আর সেই সব চাইতে ভালো খাতের একটা হচ্ছে শিক্ষা খাত। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ এত কম কেন? পাবলিক ভার্সিটির হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে কেন?

আমার ট্যাক্সের টাকা কোথায় কিভাবে খরচ হবে, সেটা ঠিক করে দেয়ার অধিকার আমার আছে। সেই অধিকার থেকে বলছি—শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হোক। সর্বোচ্চ না হলেও, কমপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ যেন থাকে।

একটা লেভেল পর্যন্ত এডুকেশন ও জ্ঞান না থাকলে তথ্য-প্রযুক্তি আপনার উপকারের চাইতে অপকার বেশী করবে। এমনকি এটা ধ্বংসের কারণও হতে পারে। খেয়াল করে দেখেন, কারা তাদের বাচ্চাদের হাতে সোশ্যাল মিডিয়া তুলে দিচ্ছে। ইউটিউব চ্যানেল খুলে দিচ্ছে। টিকটকারদের দিকে তাকান। প্রায় সকল টিকটকারই লো-ক্লাস ও লোয়ার মিডল ক্লাস। একদল কনটেন্ট বানাতে সারাদিন ব্যস্ত, আরেকদল সারাদিন সেগুলো কনজিউম করতে ব্যস্ত। যাদের থাকার কথা খান একাডেমীতে, ইডিএক্সে, য়্যুডেমিতে, যাদের ইউটিউবে টিউটোরিয়াল ও শিক্ষামূলক কনটেন্ট খোঁজার কথা, তারা কী কনটেন্ট কনজিউম করছে খেয়াল করলেই বুঝবেন ধ্বংসটা কোন দিক থেকে হচ্ছে।

আমি বলছি না যে ইউটিউবে কনটেন্ট বানানো খারাপ। কিন্তু, সেটা সবার জন্য না, সব বয়সের জন্য না। ইউটিউব, ফেসবুকে একাউন্ট করার জন্যও একটা নির্দিষ্ট বয়স লাগে। আর বাংলাদেশে দেখেন, বাচ্চারা টিকটক করছে, ইউটিউবে চ্যানেল খুলছে। গত দুই বছরে স্কুল-কলেজগুলো সব বন্ধ করে দেয়ার পর অনলাইন ক্লাশ করতে গিয়ে বাচ্চাদের হাতে ফেসবুক তুলে দিলো এদেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো। সচেতন অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে বাচ্চাদের ফেসবুক একসেস করতে দিলেও নিজেরা সবসময় মনিটরিং এ থাকেন। অসচেতনরা তা করেন না। এই অসচেতনদের অধিকাংশই লো-ক্লাস, লোয়ার মিডল ক্লাসের। এরা যে বাচ্চাদের ধ্বংস হতে দিতে চায়, এমন না। এরা আসলে জানে না। এদের সেই শিক্ষা ও জ্ঞানটুকু নেই।

প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফল যে কতটা খারাপ হতে পারে সেটা বুঝার মত জ্ঞান যাদের নেই, তাদের জন্য প্রযুক্তি অভিশাপ। এই অভিশাপের ফল এরা টের পাবে আরো পনের/বিশ বছর পরে।

আশেপাশে কত মানুশ মরে যাচ্ছে। আগেও যেত। গত দুই বছরে মনে হয় একটু বেশীই যাচ্ছে। অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে বেশী চোখে পড়ছে। ফ্রেন্ডলিস্টের কতজন রিমেম্বারিং হয়ে গেল। মাঝে মাঝে ভাবি, মরে গেলে কী হবে?

আমি যখন অনেক ছোট, স্কুলে পড়ি, তখন প্রিন্সেস ডায়না মারা গেলেন। পেপার-পত্রিকা-টিভিতে সারাদিন-রাত শুধু প্রিন্সেস ডায়না। প্রায় একমাস ধরেই চললো এসব। আমার জানা ইতিহাসে এত বেশী আলোড়ন আর কোন মৃত্যুর মাঝে দেখিনি।

তারপর...

তার পরের বছরে সামান্য দুই/একটা কিছু নিউজ হলো। এর পরের বছর আরো কম। কয়েক বছরের ভেতরে সবাই প্রায় ভুলেই গেল প্রিন্সেস ডায়না বলে যে পৃথিবীতে কেউ ছিলেন। এই ব্যাপারটা স্কুল পড়ুয়া আমার মনে এভাবে দাগ কাটলো যে- মরে গেলে তো সবাই ভুলে যাবে। যে প্রিন্সেস ডায়না মরে যাওয়াতে পুরো পৃথিবী কেঁপে গেল, তাকেই পৃথিবী ভুলে গিয়েছে। অন্য কারো মৃত্যুতে আর কী হবে? প্রিন্সেস ডায়নার মত পুরো পৃথিবী কাঁপিয়ে মরলেও আমাদের সবাই ভুলে যাবে।

এরপর...

এরপর একদিন স্টিভ জবস মারা গেলেন। এত ইনোভেটিভ একটা লোক। আলোড়ন হলো, কিন্তু প্রিন্সেস ডায়নার মত অতটা না। যথারীতি পরের বছর দুই/একটা নিউজ হলো। তারপর কয়েক বছরে আর নিউজও চোখে পড়লো না।

কিন্তু..

কিন্তু তিনি বেঁচে রইলেন অন্যভাবে। স্টিভ জবসের অ্যাপ স্টোরের জন্য অ্যাপ তৈরি করে লাখ লাখ লোক জীবিকা অর্জন করতে লাগলো। গত বছরও অ্যাপল ৬০ বিলিয়ন ইউএস ডলার দিয়েছে ডেভেলপারদের। ৬০ বিলিয়ন ডলার মানে 'পাঁচ লক্ষ ষোল হাজার' কোটি টাকা।

স্টিভ জবসকে মানুশ ওভাবে স্বরণ না করুক, এত মানুশ যে তার স্থাপন করে যাওয়া প্লাটফর্মের উপর নির্ভর করে জীবিকা অর্জন করতে পারছে, এটা তো বাস্তব। এটা তো বর্তমান। এইদিক থেকে স্টিভ জবস প্রিন্সেস ডায়ানার মত পৃথিবী না কাঁপালেও অমর হয়ে আছেন, বহু লোকের জীবিকার ভেতরে। বহু লোকের একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার মাঝে।

স্টিভ জবস মারা গেলেন ২০১১ সালে। ঐ সময় থেকেই আমার মাথায় এই ভাবনাটা একদম পার্মানেন্ট হয়ে গেল যে- এমন কিছু যদি করে যাওয়া যায় যা বহু লোকের উপকারে আসবে, বহু লোকের জীবিকার উপায় হবে, তারচাইতে ভালো আর কী হতে পারে?

আপনাকে আমাকে লোকে ভুলে যাবে, কিন্তু আমাদের অবদান থেকে যতদিন মানুশের উপকার হতে থাকবে। সেটা বিস্মরণে থেকেও এক প্রকার অমরত্ব লাভ। মানুশের অবদান তাকে বাঁচিয়ে রাখে, আমরা সেটা বুঝতে বা অনুভব করতে না পারলেও।

অপেক্ষায় থাকতাম, কখন রহস্য পত্রিকা প্রকাশিত হবে। ১৯৯৫ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সবগুলো রহস্য পত্রিকা আমার সংগ্রহে ছিলো। কী ছিলো না এই পত্রিকায়? হরর গল্প থেকে ইলেকট্রনিক্স সার্কিট ডায়াগ্রাম, আধিভৌতিকতা থেকে বিজ্ঞান, সবই ছিলো। অপেক্ষায় থাকতাম নতুন ওয়েস্ট্রার্ন বইয়ের। নতুন কোন ক্লাসিকের অনুবাদের। তিন গোয়েন্দার। মাসুদ রানার। স্কুল থেকে ফেরার পথে প্রতিদিনই খোঁজ নিতাম সেবার নতুন কোন বই আসছে কিনা!

আমার ছোটবেলা রঙ্গিন হওয়ার পেছনে অন্যতম অবদান এই সেবা প্রকাশনীর। কাজী আনোয়ার হোসেনের। আমাদের কাজী দা'র।

য়্যু উইল বি মিসড কাজী দা। আই লাভ য়্যু ম্যান!

প্যারেন্টিং - ৩৪

আমি এমন অনেক বাচ্চাদের দেখেছি যাদের চোখের ভেতরে ভয়। প্যারেন্টসদের অতি শাসনে এদের ভেতরে একটা পার্মানেন্ট ভয় ঢুকে গিয়েছে। এটা যে কতটা ক্ষতিকর যদি ঐ প্যারেন্টসরা জানতো তাহলে নিজেদের বাচ্চাদের এই ভয়ের পরিবেশ থেকে বের করে আনতো।

কেন বাচ্চাদের বকাঝকা ও ভয়ের ভেতরে রাখা খারাপ? কী হয় আসলে?

করটিসল (Cortisol) নামে একটা হরমোন আছে যেটা রিলিজ হয় যখন আমরা স্ট্রেসে থাকি। এই হরমোন আমাদের মুড, মোটিভেশন ও স্ট্রেস কন্ট্রোল করে। এটা হচ্ছে আমাদের শরীরের ন্যাচারাল এলার্ট সিস্টেম। যখন আপনি বাচ্চাকে খামোখাই বকাঝকা করতে থাকেন, তাকে ভয়ে ভয়ে রাখেন তখন তার শরীরে এই হরমোনের ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যায়। সে সবসময়ই একটা ভয়ের ভেতরে থাকে, কখন আর কী ভুল করে ফেলে, কখন আপনার বকা খায়।

তো, আপনার ভয়ে ভয়ে থাকা বাচ্চাটার শরীরে করটিসলের ব্যালেন্স নষ্ট হলে কী হয়? এটা তার শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ন ফাংশানরে শাট-ডাউন করে দেয়। দেশে জরুরী অবস্থা জারি হলে যেরকম হয় আরকি। এই শাটডাউনের তালিকায় আছে হজম প্রক্রিয়া, রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেম, ইমিউন সিস্টেম বা রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা, গ্রোথ প্রসেস বা তার বেড়ে ওঠা (কথ্য ভাষায় লম্বা-চওড়া হওয়া) থেকে শুরু করে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ন সব বন্ধ থাকে বা বাঁধাগ্রস্থ হয়।

এই বাচ্চাগুলোর ইমিউন সিস্টেম খুব দুর্বল হয় ফলে একটা বয়স পরে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। এদের ব্রেইন ঠিকমত ডেভেলপ হয় না ফলে জীবনে খুব বেশী উন্নতি করতে পারে না। এদের সাহস কমে যায়, ক্রিয়েটিভিটি ধ্বংস হয়ে যায়, ক্রিমিনাল মাইন্ডসেট গ্রো করে ক্ষেত্রবিশেষে।

ভাবেন তাহলে সেই বাচ্চাটার কথা, যে সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকে। যারে আপনি বকাঝকার ও মাইরের উপরে রাখছেন। এমনকি আপনি তারে বকাঝকা না করলেও বাসায় যে ঝগড়া-ঝাটি করেন, চিৎকার চেঁচামেচি করেন, সেটাও তার ভেতরে এধরনের ভয় তৈরি করে। এসব করে আপনি নিজের বাচ্চাদের আক্ষরিক অর্থেই আপনি ধ্বংস করে দিচ্ছেন।

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি