চিন্তা ভাবনা

অনলাইনে প্রকাশিত চিন্তা-ভাবনা সমগ্র

এক পরিচিতের বাসায় গিয়েছি। দেখলাম একটা ৪/৫ বছরের বাচ্চাকে তার মা শলার ঝাড়ু দিয়ে বাড়ি দেয়ার ভয় দেখাচ্ছে, জোরে বিছনায় একটা বাড়িও দিলো। বাচ্চাটা ভয়ে কেঁপে উঠলো। ঐ মহিলা যদি জানতো, এটা কতটা ভয়াবহ একটা ব্যপার তাহলে এই কাজ কখনোই করতো না। বাচ্চাটার চেহারা দেখেই তার অনুভূতি বোঝা যাচ্ছিলো। কিন্তু ভেতরে যে তারচাইতেও ভয়াবহ ব্যপার ঘটছে, সেটা আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে খুব ভালো জানি। ছোটবেলা আমাকে একবার ঝাড়ু দিয়ে ভয়াবহভাবে মারা হয়েছিলো। সেই ট্রমা আমার এখনো কাটে নাই।


এদেশের দু'টো জিনিষের জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন। ১) শিক্ষা ব্যবস্থা, ২) প্যারেন্টিং। এই দু'টো ব্যপার ঠিক না করলে একটা সুস্থ জাতি আপনি কোনভাবেই আশা করতে পারেন না।

মশারা দিন দিন বুদ্ধিমান হইতেছে। এই বুদ্ধিমান মশাদের নির্মূলের সবচাইতে ইফেক্টিভ পদ্ধতি হইতেছে শলার ঝাড়ুর ট্রিটমেন্ট, ঝাড়ুফাই। পদ্ধতিটা এরকম- একটা শলার ঝাড়ু পাশে নিয়ে বসবেন। মশা দেখা মাত্রই সপাং...

তো, হাতের কাছে একটা ঝাড়ু রাখছি। কিছুক্ষন পর পর চেয়ারসহ পেছনে চলে যাই আর পায়ের কাছের সব মশা মেরে ফেলি। ভালোই চলছিলো। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম মশারাও আমার চেয়ারের সাথে সাথে পেছনে চলে যায়। সুতরাং চেয়ার থেকে নেমে চেয়ারের নিচে ঝাড়ুফাই করে মশা মারা শুরু করলাম। কিছুক্ষন পর তারা সেটার প্রতিকারও বের করে ফেললো। আমি পেছনে আসলে তারা এসে আমার গায়ে বসে যায়। এখন কি আমি নিজেকে ঝাড়ু দিয়ে বাড়ি দেব? কি মুসিবত!

যাহোক, ঝাড়ুর বদলে হাত দিয়ে কিছুক্ষন মারলাম। এভাবে কয়েকদিন চলার পর দেখি ঝাড়ু হাতে নিলেই মশারা সব দরজা দিয়ে দৌড়ে পালায়। এখন কি আমি ঝাড়ু হাতে নিয়ে বসে থাকবো?

তারপর একদিন খেয়াল করলাম, আমার রুমে কোন মশা নাই। সব রুমে মশা আছে আমার রুমে নাই। মশারা বুদ্ধিমান না হইলে এই সুবিধা আমি ক্যামনে পাইতাম? এজন্যই কবি বলেছেন, ভুদাই বন্ধু থিকা বুদ্ধিমান শত্রু ভালো।

#প্যারেন্টিং - ২২

তাতিয়ানা ইদানিং আইপ্যাড আর মোবাইলের চাইতে তার খেলনাগুলো নিয়ে খেলতে আর পড়ালেখা করতে বেশী পছন্দ করে। অনেকগুলো ব্যপার সবসময় খেয়াল রাখায় এটা ঘটেছে। তার ভেতরে খুব গুরুত্বপূর্ন একটা হচ্ছে কনটেন্ট। তাতিয়ানা মোবাইল অথবা ট্যাবে কী দেখতে পারবে কী পারবে না সেটা খুব সতর্কভাবে নিয়ন্ত্রন করেছি। তবে এমনভাবে যাতে সে টের না পায়। গত পাঁচ বছরে সে কোন হিন্দী গান, নাচ কিংবা বড়দের জন্য উপযোগী কোনকিছুই দেখার সুযোগ পায়নি। সে যা দেখেছে তার প্রায় শতভাগ জুড়ে ছিলো বিভিন্ন শিক্ষামূলক কনটেন্ট। ভিডিওগুলোতে সে দেখেছে বিদেশী বাচ্চারা কিভাবে বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করে। কিভাবে যোগাযোগ করে। কিভাবে তাদের খেলনাদের সাথে খেলে। কোথাও সে দেখেনি বাচ্চারা মোবাইল কিংবা ট্যাব নিয়ে বসে আছে। কোথাও সে দেখেনি বাচ্চারা বড়দের উপযোগী কিছু (যেমন- নাচ/গান) করে বাহবা কুড়াচ্ছে। এগুলো তার মনন সম্পূর্ন ভিন্নভাবে গড়ে তুলেছে। আমার বাসায় টিভিও নাই যে সে কখনো বাচ্চাদের জন্য উপযোগী নয় এমন কিছু দেখে ফেলবে। পাঁচ বছর পর এর ফলাফল নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি।

বাচ্চাদের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রন করুন। কী দেখবে কী দেখবে না, গোপনে সেটা আপনি ঠিক করে দিন। এটা গুরুত্বপূর্ন।

একসময় আমার ধারণা ছিলো একটা দেশের রাজনীতি ঠিক করলে দেশটা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পরে দেখলাাম, মানুষ ঠিক না করে শুধু রাজনীতি ঠিক করে কোন লাভ নাই। ইন ফ্যাক্ট, মানুষ ঠিক না থাকলে রাজনীতিবিদরাও ঠিক হয় না। কারণ, তারা জনগনেরই প্রতিনিধিত্ব করে। এই উপলদ্ধি আমার জীবনের লক্ষ্য পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমার সমস্ত চিন্তা-ভাবনা, কাজকর্ম, প্রজেক্ট.. সবকিছুরই একটা মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষ ঠিক করা। এর জন্য যে কয়েকটা প্রজেক্ট আমি হাতে নিয়েছি তার ভেতরে আছে-

১) বই লেখা (টপিকঃ প্যারেন্টিং, কমনসেন্স ও কার্টেসি, সার্ভাইভাল ও ব্যবহারিক জ্ঞান, হিউম্যান সিভিলাইজেশন ও হিস্টোরী)

২) শিক্ষা ব্যবস্থা ও স্টুডেন্টদের নিয়ে কাজ করার জন্য একটা প্লাটফর্ম। কর্মসংস্থানের ব্যপারেও এই প্লাটফর্ম ম্যাসিভলি হেল্প করবে। এটা আমার সবচাইতে বড় ও দীর্ঘমেয়াদি দু'টো প্রকল্পের একটি। একইসাাথে আমার ক্যারিয়ারেরও অংশ।

৩) গ্রীন ব্লাড প্রকল্প (এটা একটা সামাজিক আন্দোলন। একটা কমিউনিটি দাঁড়াবে। কর্মজীবন থেকে অবসরের পর এটার কার্যক্রম শুরু হবে। এখন প্রস্তুতিপর্ব চলছে..)

এগুলো আমার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য... purpose of my life.

#প্যারেন্টিং - ২৩

সরাসরি উপদেশের চাইতে ইনডাইরেক্ট উপদেশ বেশী কার্যকরী।

তাতিয়ানা এসে বললো, এলসা তার কথা শুনছে না। সুতরাং এলসাকে এক গাদা উপদেশ দিয়ে দিলাম। তাতিন মনোযোগ দিয়ে শুনলো কী কী বলেছি। তাতিনকে কখনো আমি সরাসরি উপদেশ দেই না। উপদেশ জিনিষটাই আসলে কেমন যেন। তার ভেতরে আমাদের দেশে বড়রা উপদেশকে একটা বিরক্তিকর জিনিষ বানিয়ে ফেলেছে। উপদেশ দেয়ার চাইতে আলোচনার ভঙ্গিতে বুঝিয়ে বলা বেশী ভালো। আর উপদেশ যদি দিতেই হয়; সরাসরি না দিয়ে ইনডাইরেক্টলি দেয়া ভালো।

পুনশ্চঃ এই পর্বে বাচ্চাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার বিষয়ে লেখার কথা ছিলো। ঐ পর্বটা একটু সময় নিয়ে লিখতে হবে। আপাতত সময় কম। আগামী পর্বে চেষ্টা করবো।

সহজ জীবন - ৯ (মনোযোগ)

মনে করুন, মনোযোগ হচ্ছে একটা বালতি পাানি। আর আপনার জীবনটা হচ্ছে একটা বাগান যেখানে বিভিন্ন বিষয়গুলো বিভিন্ন ধরনের গাছ। যে গাছ যত পানি পাবে সেটা তত বড় হবে, তত বিস্তৃত হবে।

প্রতিদিন আপনাকে এক বালতি পানি দেয়া হয়। এই পানি আপনি কিভাবে বিতরন করছেন, তার উপরে নির্ভর করছে আপনার বাগানটা কেমন হবে।

রিটায়ারমেন্টের পর এই ব্যাড প্যারেন্টিং এর বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করবো। যদি বেঁচে থাকি...

সহজ জীবন - ৮

যে মানুষগুলোরে বেশীরভাগ মানুষ পছন্দ করে না, এদের সাথেও আমার ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয় এবং টিকে থাকে। বা, আমি টিকিয়ে রাখি। এদের থেকে আমি শিখেছি- অন্যের সাথে কেমন আচরণ করতে হয় এবং কী করা উচিত না। কথা বলার সময় কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। মনোভাব কেমন হলে অন্যরা আপনাকে বিরক্তিকর ভাববে না।

এসব ব্যপার প্রাকটিক্যালি আর কোথায় শিখতে পারতাম?

বন্ধু Russel Khan-এর বাসায় ছিলাম এক রাত। রাতে ঘুমানোর আগে সে আমাকে বিভিন্ন রকমের বাদাম, এক চামচ খাঁটিি মধু ও এক চামচ কালোজিরা দিলো খেতে। সে নাকি প্রতিদিন খায়। আমি চমৎকৃত হলাম। ফুড এন্ড নিউট্রিশন নিয়ে গত ৪/৫ বছর ধরে ভালোই ঘাঁটাঘাটি করেছি। এগুলোর গুরুত্ব আমাকে কারো বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই কিন্তু এভাবে ব্যপারটাকে আভ্যাসে পরিনত করে ফেলার কথা কখনো ভাবিনি। কিছু কিছু খাবার অভ্যাসে পরিনত করা খুব ভালো।

বাংলাদেশের মানুষের পুষ্টি সমস্যা ভয়াবহ! আমরা কৃষি প্রধান দেশ, আমাদের পুষ্টির অভাব হওয়ার কথা না। স্রেফ সচেতনতার অভাবে আমাদের পুষ্টিগত এই সমস্যা। খাওয়া দাওয়ার ব্যপারে আমাদের এই উদাসীনতার কারণে এখানে মানুষ খুব দ্রুত বুড়িয়ে যায়, নানারকম রোগ ব্যাধির শিকার হয়। পুষ্টির ব্যপারে আমাদের সচেতনতা বাড়ানোর তেমন কোন উদ্যোগও চোখে পড়ে না। অথচ, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। একজন মানুষের সুস্থ্য ও আনন্দময় জীবনের জন্য এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। খাওয়া দাওয়া ও পুষ্টির বিষয়ে গ্লিএরাতে একটা সিরিজ পোস্ট শুরু করেছি। ৩ পর্ব লেখা হয়েছে, সামনে আরো আসবে (কমেন্টে লিংক দিলাম)। আপাতত শর্টকাটে একটা লিস্ট দেই, দেখেন ফলো করতে পারেন কিনা (কিছু মিস থেকে যেতে পারে, পুষ্টি বিশারদগনের সুদৃষ্টি কামনা করছি)

প্রতিদিন যা খাওয়া উচিত-
১) প্রতিদিন ২টা কলা, কমপক্ষে ১টা
২) প্রতিদিন এক গ্লাস গরুর দুধ।
(প্যাকেটজাত গুড়া দুধ বা পাস্তুরিত দুধ খেয়ে তেমন কোন লাভ নাই)
৩) কমপক্ষে ১টা গাজর
৪) দুই গ্লাস লেবুর সরবত
৫) প্রতিদিন ৩/৪ পিস আলমন্ড, ২/৩ পিস কাজু বাদাম, ৫০-১০০ গ্রাম চিনা বাদাম (মাস্ট)
৬) রেড মিট সপ্তাহে দুইদিনের বেশী নয়, মুরগীও না
৭) বিভিন্ন প্রকার ফল-মূল, যত বেশী খাওয়া যায়। বিশেষ করে দেশী ফলগুলো।
৮) ডাল রান্না করলে, প্রচুর ডাল। দরকার হলে খাওয়া শেষে এক কাপ ডাল স্যুপের মত খেয়ে ফেলা যায়।
৯) নিয়মিত সবজি। সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ বার।
১০) প্রতিদিন কমপক্ষে ১টা ডিম
১১) এক চামচ খাঁটিি মধু (সম্ভব হলে)
১২) সপ্তাহে কমপক্ষে দুইদিন মাছ (একদিন ছোট মাছ )
১৩) বিভিন্ন প্রকার আলু, বিশেষ করে মিস্টি আলু (প্রতিদিন)
১৪) বেদানা (সপ্তাহে কমপক্ষে একটা, বিশেষ করে মেয়েরা)
১৫) পর্যাপ্ত পানি (২-৩ লিটার, এর বেশী না)

এছাড়াও ঔষধি গুনের কারণে যা যা খাওয়া উচিত-
১) সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার ২ চামচ কাঁচা হলুদের রস। কাঁচা হলুদ না পেলে ৩/৪ চামচ গুড়া হলুদ চা অথবা হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।
২) প্রতিদিন ২ কোয়া রসুন পেস্ট বানিয়ে সকালবেলা খেয়ে ফেলবেন
৩) পুদিনা পাতার ভর্তা/শরবতে দিয়ে
৪) কালোজিরা, প্রতিদিন এক চা চামচ
৫) বাসিল সীডের শরবত (সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন)
৬) পেঁয়াজের রস, দু্ই চামচ (সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন)

লেখাটা কি বেশী বড় হয়ে গেল? আরেকটু বিস্তারিত ও আরো সুন্দরভাবে গ্লিএরাতে পোস্ট করবো পরে।

আমাদের দেশে একসময় শিক্ষার হার এত কম ছিলো যে, কারো সার্টিফিকেট থাকলেই তার চাকরি হয়ে যেত। আমাদের বেশীরভাগ অভিভাবক এখনো সেটাকেই বাস্তবতা ধরে নিয়ে শুধুমাত্র ভালো রেজাল্টের উপরে জোর দিচ্ছে। ফলে, শিক্ষার্থীদের উপরে এত বেশী প্রেসার পড়ে যাচ্ছে যে তারা ক্যারিয়ারের কথা ভাবার সময়ই পায় না। ফলে প্রতি বছর লাখ লাখ গ্রাজুয়েট বের হওয়ার পরেও একটা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়ার মত যোগ্য লোক পাচ্ছে না। অতিরিক্ত বেতন দিয়ে বিদেশীদের নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতে হচ্ছে।

এসবের অবসান হতে পারে যদি মানুষকে ক্যারিয়ার ও স্কিলের ব্যপারে সচেতন করা যায়। এজন্য একটা গ্রুপ করলাম। ওখানে ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা, গাইডলাইন শেয়ার করা হবে। কেউ চাইলে নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য জব পোস্টিংও করতে পারবেন। লিংক কমেন্টে।

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি