পর্যবেক্ষণ

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ

পৃথিবীতে সবচাইতে কঠিন কাজ হচ্ছে নন-ফিকশন বই লেখা। একটা ভালো বই লেখার জন্য যে কী পরিমান পড়তে হয় আর চিন্তা করতে হয়, যারা কখনো লেখেন নাই তারা কল্পনাও করতে পারবেন না। একজন ফুলটাইম অন্য প্রফেশনের লোকের পক্ষে হুট করে একটা নন-ফিকশন লেখা প্রায় অসম্ভব (সেটা তার প্রফেশন রিলেটেড না হলে)। যারা লিখছেন, তারা আসলে তাদের সারা জীবনের পড়ালেখা ও চিন্তার উপর ভিত্তি করে লিখেন। ফলে, ভালো বই কিংবা ভালো চিন্তা পেতে হলে একটা সমাজে কিছু এরকম কিছু ডেডিকেটেড মানুশ লাগে। এবং এদের স্বাধীনতা থাকতে হয়।
বাংলাদেশ বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে এত পিছিয়ে আছে কারণ এখানে এধরনের লোকজন নাই তেমন। যে অল্প কয়েকজন আছে, তারা আবার স্বাধীন না। আমার একটা অন্যতম স্বপ্ন হচ্ছে— আমি এরকম কিছু স্বাধীন ইন্টেলেকচ্যুয়াল তৈরিতে অবদান রেখে যাবো।

পুনশ্চঃ ফিকশন লেখকদের কথা বলিনি কারণ, ফিকশন চেষ্টা করলেও লেখা যায় না। এটা গড গিফটেড ট্যালেন্ট।

মানুশ ক্রমাগত নিজের ভেতরে অন্যের মূর্তি তৈরি করতে থাকে। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো একজন অন্যজনের এই মূর্তি বানাতে গিয়ে মূলত তার নিজের মূর্তিই বানায়। সে এটা বুঝতে পারে না।

মানুশ যেমন এলিয়েন আঁকতে গিয়ে মাথা-নাক-চোখ-কান আঁকে, এরকম আরকি।

আমরা আইটি ইন্ড্রাস্ট্রির লোকেরা যে সবসময় বলি—বাংলাদেশী ক্লায়েন্টরা প্রশংসা করে না, বিদেশী ক্লায়েন্টরা কত সুন্দর প্রশংসা করে এবং বোনাসও দেয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখলাম, প্রশংসা করলে এদেশের লোকজন কাজের কোয়ালিটি কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে বিদেশীদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা নাই এরকম লোকজন/কোম্পানীগুলো এই কাজ করে। এটা সম্ভবত আমাদের জাতীয় সমস্যা। এজন্যই বাংলাদেশী ক্লায়েন্টরা প্রশংসা করতে চায় না হয়তো!

পোস্ট কোভিড এরা-তে রিমোট জব বাড়তেছে। আইটিতে তো আমরা এই সুবিধা পেয়ে আসতেছি এক যুগেরও বেশী সময় ধরে। অন্যরাও এখন পাবে।

রিমোট জব বাড়ার ফলে পৃথিবীতে একটা ব্যাপক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। আপনাকে শহরে থাকতে হবে না বা বিদেশ যেতে হবে না নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী জব করার জন্য। এটা কোম্পানীগুলোর জন্য যেমন ভালো পাবলিকের জন্যও ভালো। বিকেন্দ্রীকরণ হবে। শহর কেন্দ্রীক সভ্যতার পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে যা মানব সভ্যতার একটা বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

বাংলাদেশের লেখকরা বই বিক্রি হয় না বলে হা-হুতাশ করে। কিন্তু তাদেরকে বই বিক্রি বাড়ানোর জন্য কিছু করতে দেখা না সচরাচর; বরং সাধারণের বোধগম্যতার বাইরে লেখালেখি করতে পারারে এদেশে স্টাবলিশ করেছে যা তাদের পাঠক আরো কমিয়ে দিয়েছে। গত ৫০ বছরে সেবা প্রকাশনী ও হুমায়ূন আহমেদ কিছু পাঠক তৈরি করতে পেরেছে। আমাদের 'এলিট' ইন্টেলেকচ্যুয়ালরা আবার সেবা এবং হুমায়ূন, কাউকেই দেখতে পারে না।

একাডেমিক বইয়ের বাইরে এদেশে সবচাইতে বেশী বিক্রি হয় ইংরেজী বই। এই পাঠকদের অধিকাংশই ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্ট ও হাই প্রোফাইল ব্যক্তিরা। ইংলিশ মিডিয়ামের কথা বিশেষ করে উল্লেখ করলাম কারণ, আমাদের এখানে পাঠক তৈরি না হওয়ার জন্য দায়ী আমাদের এডুকেশন সিস্টেম। একটা মুখস্ত-বিদ্যা সিস্টেমের ভেতর দিয়ে যাওয়া এবং ৯টা-৫টা সরকারী চাকুরী করার স্বপ্ন নিয়ে গড়ে ওঠা জনগনকে বই পড়ানো কঠিন। এডুকেশন সিস্টেম বদলাতে পারলে এখানে প্রচুর পাঠক তৈরি হবে।

এসব ব্যাপার ভারতের অখন্ডতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। কয়েক বছর আগেও ভারতীয় মুসলিমরা নিজেদের ভারতীয় পরিচয় নিয়ে গর্ব করতো। এখন পরিস্থিতি খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে।

আমেরিকা এই পরিস্থিতিটা ঠেকানোর একটা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কারণ বৃহৎ ভারত তাদের দরকার (মূলত ভারতের বাজার)। কিন্তু পারবে না সম্ভবত ঠেকাতে। এর ভেতরে ভারত রাশিয়া থেকে S-400 নিয়ে আমেরিকার সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে। এখন আর আমেরিকা ভারতের অখন্ডতা আর চাইবে কিনা সেটাও ভাবার বিষয়। চায়নাও ভারতের জন্য একটা বড় হুমকি (যদিও ভারত চায়নার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে)।

ভারত ভাঙলে একটা মুসলিম রাষ্ট্র তৈরি হতে পারে যেখানে ভারতের সব মুসলিমরা মাইগ্রেট করবে। ৪৭-এর মত।

আশরাফ গানি কলম্বিয়া ইউনি থেকে এন্থ্রপোলজিতে পিএইচডি করেছেন। ইউসি বার্কলে আর জন হপকিনসের এন্থ্রপলজির শিক্ষকও ছিলেন। গুগল স্কলারে তার একাডেমিক লেখালেখিও আছে বিস্তর। এত "জ্ঞান" নিয়া লোকটা হইলো দালাল এবং অবশেষে পলাতক কাপুরুষ।

কিছুদিন আগে ফেসবুকে বুদ্ধিজীবি নিয়া অনেক কাহিনী হলো। তখন একজনরে বলতেছিলাম— যে দেশে প্রায় ৫০০ দিন টানা স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও সেটা নিয়ে খুব বেশী লোকরে চিন্তিত হতে দেখা যায় না, সেই দেশে বুদ্ধিজীবি খুঁজে লাভ নাই।

আজকে তিনি ম্যাসেজ দিয়ে বললো- আফগানিস্থানের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়াও তারা সবাই পেরেশান, আর আপনি বলেন কেউ চিন্তিত না!

বুঝলাম, ভঙ্গুর আফগানিস্থানে আমাদের কী রপ্তানী করতে হবে!

সততা কোন যোগ্যতা না, এটা একটা ট্রেইট মাত্র। স্বাভাবিক মানুশ হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ন ট্রেইট। যখন কোন সভ্যতায় সততা এক্সসেপশন হয়ে ওঠে, তখন বুঝবেন ঐ সভ্যতা পঁচে গেছে। ওখানে স্বাভাবিক মানুশের সংখ্যা এতই কমে গেছে যে কাউকে সৎ হতে দেখলে সবাই অবাক হয়ে যায়।

জ্ঞান ও যোগ্যতার অভাব থাকলে শুধুমাত্র সততা দিয়ে কিছু হয় না। অযোগ্যরা নিজেদের 'সততারে' পুঁজি করে মানসিক রোগীতে পরিনত হয়।

চাঁদপুরে আমার দাদা বাড়িতে কাচারি ঘর নামে একটা ঘর ছিলো যেখানে মুসারফিররা থাকতো। তাদের থাকা-খাওয়া, সুবিধা-অসুবিধা বাড়ির লোকরা দেখতো। এই কালচার এখন আর নেই কোথাও।

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি