চিন্তা ভাবনা

অনলাইনে প্রকাশিত চিন্তা-ভাবনা সমগ্র

সহজ জীবন - ২২

অহংকাররে কেন আমি হীনমন্যতার মুখোশ বলি তার একটা ছোট ব্যাখ্যা দেই।

মনে করেন আপনার সামনে এক হাজার মাইল লম্বা একটা রাস্তা। কিন্তু আপনি পাঁচ মাইল পার হয়েই ভাবতেছেন—আপনি তো অনেকদূর পৌঁছে গেছেন এবং সেইটা নিয়া অহংকার করেন। আপনি আসলে ঐ এক হাজার মাইল রাস্তা পার হওয়ার কথা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেন না। এমনকি এই পাঁচ মাইলও যে পার করতে পারবেন, সেটাও ভাবেন নাই। কারণ, নিজের সম্পর্কে আপনার ধারণা খুব একটা উঁচা না। আপনার ভেতরে হীনমন্যতা আছে। আর তাই পাঁচ মাইলরেই বিশাল কিছু ভেবে অহংকার করতেছেন।

বস্তুত, মানুশ যা নিয়া অহংকার করে; একটু উপর থেকে তাকালেই বুঝা যায় সেটা কতটা ক্ষুদ্র একটা অ্যাচিভমেন্ট।

পার্টনারশীপ - ৬

পৃথিবীর সবচাইতে দামী জিনিষ হচ্ছে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব। কিছু কাছের মানুশ পাওয়া। কাছের মানুশ পাওয়াটা এখন ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ম্যাটেরিয়ালিজমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও প্রসারের ফলে এটা ঘটেছে। যার অনেক আছে, তাকেও অভাবী বানিয়ে দেয় এই জিনিষ। যার কারণে একজন আরেকজনের সাথে সম্পর্ক করে কিছু না কিছু পাওয়ার জন্য। কোন একটা ম্যাটেরিয়ালিস্টিক গেইনের জন্য। ফলে, যেখানে লাভ নাই সেখানে সম্পর্কও থাকে না। অথচ, সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব জিনিষটা এরকম জাগতিক চাওয়া পাওয়ার জিনিষ না।

একটা পর্যায়ে এসে অবশ্য অনেকে নিজের ভুলটা বুঝতে পারে। ম্যাটেরিয়ালিজমের প্রচার ও প্রসারে জীবন উৎসর্গ করে দেয়া লোকজনকেও এই রিয়েলাইজেশন স্বীকার করে যেতে দেখা গিয়েছে। বিদেশী অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির এধরনের স্বীকারোক্তি আছে। বাংলাদেশেও কিছু উদাহরণ আছে। এদেশের জনপ্রিয় নায়িকা ও সাবেক সংসদ সদস্য কবরী একটা ইন্টারভিউতে বলেছিলেন- 'জীবনে একটা ভালো বন্ধু পেলাম না।'

এই ভালো বন্ধু তৈরি করতে হয় ইয়ং বয়স থেকেই। একটা বয়স পার হয়ে যাওয়ার পর ভালো বন্ধু তৈরি করা বা পাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার।

ভালো বন্ধু ও কাছের মানুশ পাওয়ার একটা গুরুত্বপূর্ন সোর্স হচ্ছে ফ্যামিলি। কিন্তু ম্যাটেরিয়ালিজম এখানেও বাঁধা তৈরি করে রেখেছে। হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার (হীনমন্যতার মুখোশ), জাগতিক চাওয়া-পাওয়া ফ্যামিলির সদস্যদের কাছে আসতে দেয় না। এমনকি নিজের ভাই-বোনদের মাঝেও এটা দুরত্ব তৈরি করে দেয় (এটা কিভাবে ঘটে আমার জানা নাই। আমাদের ভাই-বোনদের ভেতরে যে বন্ডিং সেটা আমি বাইরের কোন ফ্যামিলিতে রেয়ারলি দেখতে পাই। এ বিষয়ে পরে আরো কথা হবে।)
পৃথিবীর সবচাইতে নিকৃষ্ট পলিটিক্স হচ্ছে ফ্যামিলি পলিটিক্স। সবচাইতে স্টুপিডও (স্টুপিড কেন সেটা নিয়ে পরে আরো কথা হবে)। এই ফ্যামিলি পলিটিক্সের মূলেও আছে বস্তুবাদ।

অনলাইনে একটা ব্যাগ অর্ডার দিলাম। হ্যাম্প (Hemp) ফাইবারের তৈরি (মানে গাঁজা গাছ থেকে তৈরি সুতা)। এই ফাইবারের সাসটেইনেবিলিটি নাকি সবচাইতে ভালো। ব্যাগ কোম্পানী এটার জন্য লাইফ টাইম ওয়ারেন্টি দিচ্ছে। এর আগে হ্যাম্প ফাইবারের তৈরি জুতা বের করেছিলো এরা, সেটার ট্রাস্ট পাইলট রেটিং দেখে এদেরকে লেজিট মনে হলো।

প্রোডাক্টিভ হলে পাবলিক কত কী করতে পারে! আনপ্রোডাক্টিভরা তো গাঁজা খাইয়াই কুল পায় না!

এডুটেকের যতটুকু বিকাশ ২০৩০ নাগাদ হওয়ার কথা, কোভিডের কারণে সেটা এখনি হচ্ছে। আমেরিকার এডুটেক মার্কেট নিয়ে আমরা গত দুই মাস ধরে ঘেঁটে যা বুঝলাম, ওখানে প্রচুর সম্ভবনা আছে আমাদের জন্য। আমরা যে কয়টা সার্ভিস স্টাডি করলাম, খুব সাধারণ সব সার্ভিসে মিলিয়ন মিলিয়ন পেইড সাবসক্রাইবার।

আমেরিকার এডুটেক মার্কেট বুমিং। ওখানকার স্কুল শুটিং এর ঘটনাগুলো প্যারেন্টসদের মনে যে ভীতি তৈরি করেছে, এটাও এডুটেকের উত্থানে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। বিশেষ করে গত সপ্তাহে যে ১৯টা বাচ্চাকে মেরে ফেললো, আমেরিকানদের উপরে সেটা মারাত্বক প্রভাব ফেলছে। ওখানকার স্কুলিং সিস্টেম পুরোপুরি অনলাইনে চলে আসলেই প্যারেন্টসরা খুশী, এমন একটা অবস্থা।

বাংলাদেশে যারা এডুটেকে ইনভেস্ট করতেছেন, আপনারা আমেরিকার দিকে নজর দেন। এত বিশাল মার্কেট, আমরা ১০০ টা স্টার্টাপ দিয়েও পুরো মার্কেট কাভার করতে পারবো না। ভারতীয়রা ঐ মার্কেটটা খেয়ে ফেলার আগেই আসেন আমরা ধরতে শুরু করি।

এখন থেকে ভার্সিটিয়ান-থিংকার একটা আমেরিকান স্টার্টাপ। ছবিতে যে বাড়িটার সামনে একটা গাড়ি পার্ক করা অবস্থায় দেখতে পাচ্ছেন, ওটা আমাদের সাময়িক হেড-কোয়ার্টার।

আমেরিকার ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকের সফলতার পেছনে একটা ইন্টারেস্টিং কাহিনী আছে। ওরা করলো কী, ব্যাংকের কাজে আসতে পারে এরকম যোগ্য লোকদের যাকে যেখানে পেল; সবাইকে হায়ার করে ফেললো প্রথমে। হায়ার করার সময় লোকগুলোর কাকে কোন পোস্টে দেয়া হবে, সেটাও ঠিক করেনি। তারপর, ধীরে ধীরে যে যেখানে সবচাইতে ভালো ফিট হবে সেখানে তাকে বসানো হলো। (তথ্য সূত্র: Good to Great by Jim Collins)

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য এধরনের একটা পলিসি নেয়া যেতে পারে। একাডেমিক সিলেবাস আর সিস্টেম বদলানোর আগে দেশের সেরা লোকগুলোরে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ফেলতে হবে। তারপর তাদেরকে ট্রেইনিং দেয়া হবে, সাথে এক্সাম নিতে হবে। মিলিটারি একাডেমিতে একজন অফিসার তৈরি করা হয় যেভাবে, অনেকটা ওরকমভাবে। সেই সাথে একাডেমিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারে বিনিয়োগ করতে হবে প্রচুর। সেই সাথে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও সম্মান বিসিএস ক্যাডারদের মত করতে হবে। তারপর থেকে এদেশের শিক্ষা ব্যস্থার উন্নতি শুরু হবে।

ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও শিক্ষকদের পেছনে বিনোয়োগ না বাড়িয়ে শুধুমাত্র সিলেবাস ও কনটেন্ট পরিবর্তন কোন কাজে আসবে না।

নন-ফিকশনের ক্ষেত্রে বাংলা বইয়ের চাইতে ইংরেজী বইয়ের মার্কেট বড় এদেশে। মুখস্ত-বিদ্যা নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা এর জন্য দায়ী।

ঢাকার বাইরে অনেক ভালো ভালো লেখক-চিন্তক আছেন; নিভৃতচারী। দেশের সার্বিক বুদ্ধিবৃত্তিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আপনাদের সামনে আসা জরুরী। আপনাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো সবার সামনে তুলে ধরতে পারলে এবং লেখালেখি ও প্রকাশনার স্পেস দেয়া গেলে দেশের সার্বিক বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় সেটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই, আপনাদেরকে দেশবাসীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই আমরা। থিংকার নেটওয়ার্ক আপনাদের পরিচিতি ও কর্ম দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে সাহায্য করবে। আর এজন্য আমাদের ৬৪ জেলা ক্যাম্পেইনে শুধুমাত্র আপনাদের জন্যই একটা বিশেষ চা-চক্র ইভেন্ট থাকবে।

ঢাকার বাইরের লেখক-কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক ও চিন্তকদের ভেতরে যারা এই চা-চক্রে যোগ দিতে চান, কষ্ট করে আমাকে ইনবক্সে টোকা দিন (আমার রেসপন্স করতে দুই/চার ঘন্টা দেরী হলে রাগ করবেন না দয়া করে)।

প্রতি জেলায় থিংকার ক্লাবের শাখা তৈরি এবং বুক পয়েন্ট নেটওয়ার্ক তৈরিতে যারা থাকতে চান, তারাও যোগাযোগ করতে পারেন।

ক্যাম্পেইন শুরু হবে আগামী বছরের প্রথম দিকে। এবছরের বাকীটা সময় আপনাদের সাথে নেটওয়ার্কিং চালিয়ে যেতে চাই। তাতে আপনাদের সুবিধাজনক সময়ে আপনার জেলায় ক্যাম্পেইন প্ল্যান করতে সুবিধা হবে।

ফেসবুকে আমার দুইটা জিউশ ফ্রেন্ড আছে। দুইজনেই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। একজনের সাথে পরিচয় হয়েছিলো অনলাইনে গেম খেলতে গিয়ে, আরেকজনের সাথে একটা প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে। এরা যে কোন লেভেলের জিনিয়াস! বন্ধুত্বটা এজন্যই হয়েছে মূলত।

এই দুই জিনিয়াসের সাথে মোটামুটি সব টপিকেই চমৎকার আলোচনা করা যায়। আর এদের পোলাইটনেসও এক্সট্রা অর্ডিনারি লেভেলে। এদের IQ যেমন হাই, EQ-ও তেমন।

তো, এদের একজন গতকাল 'ই-য-রা-ইল একটা টে/রোরিস্ট নেশন' লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিছে। ঐখানে তার অন্য জিউ ফ্রেন্ডরা এসে আর্গুমেন্ট করতেছে। সেই আর্গুমেন্টও দেখার মত। আর্গুমেন্ট আসলে কিভাবে করতে হয়, অন্যের প্রতি কতটা রেসপেক্ট দেখানো সম্ভব একটা তর্কের মাঝে, এগুলো আমি এই ছেলের অতীতের বিভিন্ন আর্গুমেন্টেও দেখেছি। ভালো লাগে দেখতে।

আমার দীর্ঘদিনের একটা পর্যবেক্ষন এরকম— 'যে মানুশ যত বুদ্ধিমান সে অন্যের প্রতি তত সম্মান দেখাতে পারে।' এদেরকে দেখে আমার এই ধারণাটা আরো শক্ত হয়।

ঘুমন্ত শহরে…

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি