অর্থনীতি

বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলংকার মত হবে ভেবে আনন্দ পাওয়ার কিছু নেই। একটা বিষয় মাথায় রাখেন। যাদের কারণে দেশের অবস্থা খারাপ, তারা কিন্তু সম্পদ গড়েছে দেশের বাইরে এবং সময়মত পালিয়ে যাবে। বিপদে পড়বে দেশে থাকা সাধারণ পাবলিক।

আপনার যদি সিক্স ফিগারের স্যালারিও থাকে, এত নিশ্চিন্ত হইয়েন না। কোভিড সময়কালে সবচাইতে বেশী জব হারিয়েছে সিক্সফিগারওয়ালারা। আর সাধারণ মানুশের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে যারা আপনাকে সিক্স ফিগারের স্যালারি দিচ্ছে, তাদের ব্যবসাও কমে যাবে এবং আপনি জব হারাবেন। আপনার জন্য আর খারাপ খবর হচ্ছে— যোগ্যতা বেশী থাকার কারণে সাধারণ জবগুলোতে আপনাকে কেউ নিবে না (কারণ, তারা জানে যেকোন সময় আপনি সুইচ করবেন)। ফলে, আপনার বিপদ আরো বড় আকারে আসবে।

আপনি যদি বিসিএস ক্যাডার হয়ে থাকেন, এত নিরাপদ বোধ কইরেন না। সরকার জনগনের ট্যাক্সের টাকায় আপনাকে পোষে। সরকারের আয় না থাকলে আইন পরিবর্তন করে আপনাকে ছাঁটাই করতে সরকারের এক সপ্তাহও লাগবে না। তাছাড়া, জনরোষের ভয় তো আছেই। জনগন রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি আপনাদেরকেও ধরবে (শ্রীলংকায় দেখেন কী হয়েছে)। রাজনৈতিক নেতারা তো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে, আপনি পালাতে পারবেন না।

যারা ব্যবসা-বানিজ্য করে সুখে-শান্তিতে আছেন, আপনাদের ভয় আরো বেশী। এটা মাথায় রাখেন যে জনগনের ক্রয়ক্ষমতা কমা মানে আপনার ব্যবসা কমা। যে লোকটা মাসে ৩০/৪০ হাজার টাকা ইনকাম করে, তার খরচও কম। আপনার খরচ (ওভারহেড কষ্ট) কিন্তু বেশী। সার্ভাইব করা আপনার জন্য বেশী ডিফিকাল্ট হবে। কোভিড-১৯ অলরেডি কিছুটা ডেমো দিয়ে গিয়েছে।

অর্থনীতি হচ্ছে একটা ট্রেনের মতন। গতি পড়ে গেলে বা থেমে গেলে আবার গতিশীল করতে অনেক সময় লাগে। তাই দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে, দূর্নীতি কমাতে, টাকা পাচার রোধ করতে সবাই একসাথে কাজ করেন। এটা সকলের জন্যই ভালো।

বাংলাদেশ আসল ধাক্কাটা খাবে আর দুই বছর পরে, যখন এতদিনের তৈরি ঋণ ফেরত দেয়া শুরু হবে। কাগজে কলমে দরিদ্র দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়ার ফলে অনেক আন্তর্জাতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে, যেটা পরিস্থিতি আরো খারাপ করে দিবে। ঐসময় যারাই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, পাবলিকের মাইর থেকে বাঁচা খুব কঠিন হবে। ফলে, বর্তমানে যে সংকট চলছে, এর থেকে বের হয়ে আসতে পারলেও লীগ মনে হয়না সেই সময়টাতে ক্ষমতায় থাকতে চাইবে। সামনের নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসবে, এরা হবে বলির পাঠা।

সরকারী হিসাবে গত এক বছরে আমেরিকার মূদ্রাস্ফিতি ৬.২% (বেসরকারী হিসাবে নাকি ১২% এর বেশী)। ২০২১ এর পয়লা জুলাই ইউএস ডলারের সাথে টাকার বিনিময় হার ছিলো ৮৩.২১ যা এখন ৮৫.৭২। তাহলে বাংলাদেশের বর্তমান মূদ্রাস্ফিতি কত পার্সেন্ট?

২১০০ সালে পৃথিবীর সবচাইতে বেশী জনসংখ্যার দেশ হিসেবে প্রেডিক্ট করা হচ্ছে ভারতকে। আবার, মুসলিমরা সংখ্যায় সবচাইতে বেশী হবে ধারণা করা হচ্ছে। এসব প্রেডিকশন বাস্তবে ফলুক বা না ফলুক, এগুলোর উপরে ভিত্তি করে পৃথিবীতে অনেক ঘটনা ঘটতেছে। ভারতের মোদী সরকারের কাজকর্মও এসব ঘটনার অংশ।

এবিষয়ে কিছু ইন্টারেস্টিং পর্যবেক্ষন শেয়ার করি-
১) গত বিশ বছর ধরে বিশ্বব্যপী বেশ জোরেশোরে এন্টি মুসলিম ক্যাম্পেইন চলতেছে। এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে আমেরিকা, ইউরোপ, ভারত এবং চীনে। ফলে, মুসলিমরা আক্রান্তবোধ করতে শুরু করেছে। এতে তাদের ভেতরে ইউনিটি বাড়তেছে। ব্যপারটা টের পেয়ে পশ্চিম নীতিনির্ধারকরা মুসলিমদের ব্যপারে উদার নীতি অবলম্বনের চেষ্টা শুরু করেছে কিন্তু সুবিধা করতে পারতেছে না। মুসলিম বিদ্বেষের সুযোগে খ্রিস্টান মৌলবাদ ফিরে আসতেছে সেখানে। এটা তাদের জন্য বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতেছে।

২) এন্টি মুসলিম ক্যাম্পেইনে ভারতের অংশগ্রহনও চোখে পড়ার মত। কিন্তু, এটা ভারতের অখন্ডতা নষ্ট করছে। সেই সাথে ভারতে হিন্দু-মুসলিমদের ভেতরে দুরত্ব বাড়াচ্ছে। হিন্দু-মুসলিমদের এই দুরত্ব ভারতের জন্য কী ফল বয়ে আনতে পারে, তা বুঝার জন্য তাদের জনসংখ্যার প্রেডিকশন বুঝা গুরুত্বপূর্ন।

৩) ভারতে বিপুল পরিমান কন্যা সন্তান ভ্রুন হত্যা করা হয়। আর এই কাজটা মূলত করে হিন্দুরা। এর ফলে ওখানে হিন্দু জনসংখ্যার ছেলেঃমেয়ে রেশিও পরিবর্তন হচ্ছে। ভারতে মেয়েদের নিরাপত্তা কমে যাওয়ার পেছনে এর একটা যোগ আমি দেখতে পাই। এই নিরাপত্তাহীনতার কারণে কন্যা শিশু মেরে ফেলার হার আরো বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে জ্যামেতিক হারে বাড়ার সম্ভবনা আছে। ফলে, ভবিষ্যত ভারতীয় হিন্দুরা বিয়ে করার মত মেয়ে পাবে না। ব্যপারটা আরো জটিল আকার ধারণ করেছে জাত-পাতের কারণে। হিন্দুরা চাইলেই যেকোন জাতের মেয়েদের বিয়ে করতে পারে না। ফলে, ভারতের হিন্দু জনগোষ্ঠীর সামনে বড় ধরনের বিপদ অপেক্ষা করতেছে। কী হবে, বলা যায় না কিছু। তবে, ভালো কিছু যে না, সেটা অনুমান করা যায়।

৪) পশ্চিমারা (বিশেষ করে আমেরিকা ও ব্রিটেন) ভারতের অনেক অন্যায় সহ্য করতেছে শুধুমাত্র বিপুল পরিমান ভারতীয় জনসংখ্যার জন্য। প্রেডিকশন অনুযায়ী পৃথিবীর সবচাইতে বেশী জনসংখ্যার দেশ হতে যাচ্ছে ভারত। আবার চীন জাপানের মতই বুড়ো-বুড়ির দেশে পরিনত হতে যাচ্ছে। ফলে, ভারতের এই বাজার সবাই দখল করতে চাচ্ছে। চীনও।

৫) পশ্চিমাদের এন্টি মুসলিম ক্যাম্পেইন ব্যাক ফায়ার করার পর ভারতের এন্টি-মুসলিম ক্যাম্পেইন সফল হওয়ার তেমন কোন কারণ নাই। আবার কন্যা শিশু হত্যা ও নারীদের সামগ্রিক অবস্থার (নিরাপত্তা ও সামাজিক অবস্থান) কারণে ওখানে হিন্দু জনসংখ্যাও কমতে শুরু করবে। এর ফলে ভারত পৃথিবীর সবচাইতে জনবহুল দেশ হলেও আলটিমেটলি সেটা হবে বিশ্বের সবচাইতে বড় মুসলিম দেশ। যদি না তার আগেই ভারত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখবেন, সবকিছুর গোড়ায় আছে অর্থনীতি। অর্থনীতির সাথে আবার জনগনের বিশাল যোগ আছে। যারা সংখ্যায় বেশী, তাদের উপরে নির্ভর করে অনেক কিছু। এই দুইটা ব্যপাররে উপরের ফ্যাক্টগুলোর সাথে পারমুটেশন-কম্বিনেশন করে দেখেন, ইন্টারেস্টিং সব ইনসাইট পাবেন।

পুনশ্চঃ এ সংক্রান্ত আগের পোস্টে যে এনালাইসিসটা দেব বলেছিলাম, এটা সেই এনালাইসিস না। এটা যাস্ট ছোট একটা অংশ যাতে রিলেটেড কিছু ব্যপার তুলে ধরলাম। আগের পোস্টের লিংক কমেন্টে।

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।

সাম্প্রতিক লেখা

যেসব টপিক নিয়ে লেখালেখি করছি