সিমুলেশন গেম আমার খুব প্রিয়। তো, একটা লাইফ সিমুলেটর খেলতে শুরু করলাম। গেমটা শুরু করে প্রথম কিছুক্ষন কিছুই বুঝি না... ঐদিকে সময় চলে যাচ্ছে। ১৬ বছর বয়স থেকে শুরু, ২১ হলে বাসা থেকে বের করে দিবে.. ঐদিকে আমি কিছুই করি না। এক বছর চলে গেছে, হঠাৎ আবিষ্কার করলাম পজ বাটন আছে, মানে সময় আটকে দেয়ার ব্যবস্থা আছে (ইশ... রিয়েল লাইফে যদি থাকতো)। তো, পজ করে কিছুক্ষন ঘাঁটাঘাটি করে মোটামুটি বুঝলাম। স্কুল-কলেজে পড়ে ডিগ্রী নিতে হবে, পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করে কিছু উপার্জন করতে হবে।

তো, ভর্তি হলাম একটা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোর্সে। পাশাপাশি থালা-বাসন মাজি, তাতে মাসে ৩৫০ ডলার উপার্জন হয়। যেহেতু বাপের হোটেলে খাই-দাই, তাই টাকা জমতে শুরু করলো। দুই বছর ধরে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোর্স করার পর মনে হলো, ধুর..... ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করতে গেলাম কেন? সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোর্স করি। এই দিকে বয়স ১৯ পার হয়ে গেছে। ভর্তি হলাম সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোর্সে। এর মাঝে এক বালিকার সাথে রিলেশন হলো। জমানো টাকা থেকে তারে গিফট টিফট করি। টেকা-পয়সা বেশী না থাকায় বেশী গিফট করতে পারি না। থালা-বাসন মাইজা আর কতই বা পাই! বেটি গেল ভাইগা (স্যাঁকা খাওয়ার ইমো হপে)।

ভাবলাম, ধুর... আগে ক্যারিয়ার ঠিক করি। ঐদিকে সফটওয়্যার ডেভেলপার কোর্স তো এখনো শেষ হয় নাই কিন্তু এক বছর থালা-বাসন মেজে অভিজ্ঞতা হইছে... একটা প্রমোশন নিলাম। এখন পাই ৪৫০ ডলার প্রতি মাসে। এর মাঝে কলেজ ডিগ্রী কমপ্লিট হওয়ার দুই মাস আগে বাসা থিকা দিলো বাইর কইরা :( .... এবার দেখি ম্যালা খরচ। এক রুমের ভাড়া মাসে ২৫০ ডলার, খাবার কিনতে হয় আরো ১৫০ ডলারের। মেডিক্যাল ইন্সুরেন্সের জন্য আরো ১০০ ডলার। সব মিলায়া ৫০০ ডলার প্রতি মাসে খরচ। জমানো টাকা ভাঙিয়ে খাই.. এর মাঝে আরেক বেটি আসছে রিলেশন করতে। আমার খাওয়ার টেকা নাই, রিলেশনশীপ কেমনে হবে? কইলাম, ভাগ!

তারপর দুই মাস অতি কষ্টে পার করলাম। সফটওয়্যার ডেভেলপার কোর্স শেষ। ট্রেইনি সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে জয়েন করলাম এক জায়গায়.. মাসে পাই ১৬০০ ডলার। ১৬০০ ডলার অনেক টেকা মনে হইলো। কিন্তু ভার্সিটিতে ভর্তি হতে গিয়া দেখি ৭৫০ ডলার প্রতি মাসে খরচ। প্রমোশন নিতে হলে ডিগ্রী লাগবে, তাই ভর্তি হয়া গেলাম। এইদিকে সময় তো চইলা যাইতছে। প্রথমেই দুই বছর ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোর্সে খরচ করে ফেলার জন্য নিজেরে গাইলাইতেছি আর মাসে ২০০ ডলার কইরা জমাইতেছি। কারণ, মাস্টার্স ডিগ্রীর জন্য মাসে আবার ১০০০ ডলার খরচ! বয়স বেড়ে যাইতেছে ঐদিকে টেকা-পয়সাও নাই... তাই বালিকারাও আসে না গার্লফ্রেন্ড হইতে। হিসাব করে দেখলাম, মাস্টার্স কমপ্লিট করে জবে প্রমোশন নিতে নিতে বয়স হয়ে যাবে ২৯। হইলোও তাই। ততক্ষনে মাস্টার্স কমপ্লিট। জুনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার থেকে সিনিয়র পর্যন্ত গেলাম। মাসে পাই ৩১০০ ডলার।

ভাবলাম এইবার রিলেশনশীপ করা যাক। করলাম। বালিকার পেছনে অনেক খরচ টরচ করে প্রপোজ করলাম। রাজী হইলো। সেও সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার.. ৩১০০ পায় মাসে। সেখান থেকে আমার একাউন্টে যোগ হয় ৬০০ ডলার। কিন্তু বউয়ের জন্য ফুড আর হেল্থ ইন্সুরেন্সের খরচও বাড়ছে। তারপরেও, ভালোই চলতেছিলো। ঝামেলা লাগলো বাচ্চা হওয়ার পর থিকা। উন্নত বিশ্বে বাচ্চা পুষতে যে মাসে ম্যালা টাকা লাগে এইটা ভুলে গেছিলাম। আবার গরীব হয়ে গেলাম। ঐদিকে পাঁচবছর সিনিয়র হিসেবে কাজ না করলে প্রমোশনও নাই। এইদিকে বউয়ের সাথে রিলেশনশীপ ঠিক রাখতে গিফট করতে গিয়া জমানো টাকা সব খরচ হয়ে যায়...‍! কয়েক বছরের ভেতরে বাচ্চা বড় হয়ে স্কুলে যাওয়া শুরু করবে, তখন খরচ আরো বাড়বে। কী-যে হবে.. ভাবতে ভাবতে ঘুমাসে না। হিসাব করে দেখলাম, প্রথম থেকেই যদি সময় হিসাব করে চলতাম, তাহলে এই অবস্থায় পড়তে হতো না। তারপর যা হওয়ার তাই হইলো.. বাচ্চা বড় হইলো কিন্তু আমার প্রমোশন তো হয় নাই। এর মাঝে বাচ্চার জন্য আলাদা রুমওয়ালা বাসা নিতে গিয়ে পুরাই ঋণগ্রস্থ হয়ে গেলাম। আর এইসব চিন্তায় স্বাস্থ্য খারাপ হইতে শুরু করলো। স্বাস্থ্য খারাপ হইতে হইতে শ্যাষে মইরাই গেলাম :(

মরাল অব দ্য স্টোরিঃ আপনে যদি পরিনত বয়সের কেউ হয়ে থাকেন, তাইলে এইটার মরাল দিয়া আপনার কোন উপকার হইবো না। খামোখাই সময় নষ্ট করলেন।

আর যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার কপালে দুঃখ আছে। পড়ালেখা বাদ দিয়া এত বড় পোস্ট পড়ে সময় নষ্ট করলে কপালে দুঃখ ছাড়া আর কী আছে? সময় গেলে সাধন হপে না!

Trivuz Alam

Trivuz Alam

কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।