আমাদের দেশের মানুষের এত অসুখের পেছনে অনেক বড় চারটা কারণ হচ্ছে- ১) খাদ্যাভাস ও খাবারে ভেজাল, ২) ফার্মেসী থেকে নিজে নিজেই ঔষধ কিনে খাওয়া, ৩) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব ও ৪) মানসিক দিক থেকে দুর্বল থাকা বা ভুল ধ্যানধারনা পোষণ করা।
নিজে নিজে ঔষধ খাওয়া, খাদ্যাভাস ও মানসিক দিকগুলো নিয়ে ফেসবুক স্টেটাসে বলে শেষ করা যাবে না। এগুলো নিয়ে আর্টিকেল লেখার চেষ্টা করছি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও অত ছোট টপিক না আর এর সাথে অনেক কিছু জড়িত। সেই অনেক কিছুর ভেতরে সামাজিক দিকটা নিয়ে কিছু বলি। খেয়াল করলে দেখবেন, এদেশে উচ্চ বিত্তের লোকেরা যতটা পরিচ্ছন্ন নিম্নবিত্তের লোকেরা ততটা নয়। অথচ ব্যপারটার সাথে বিত্তের তেমন কোন সম্পর্ক নেই। ইউরোপ-আমেরিকায় একদম যাযাবরদের বাদ দিলে নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তের সকলেই পরিচ্ছন্ন থাকছে। ব্যপারটা কালচারাল। সংস্কৃতির একটা গুরুত্বপূর্ন দিক হচ্ছে এই পরিচ্ছন্নতাবোধ (cleanliness)। তবে শুধু একা এই সংস্কৃতি ধারণ করে লাভ নেই। আপনার বাসা পরিষ্কার থাকবে কিনা, তা নির্ভর করছে আপনার বাসার সকলে সাংস্কৃতিক দিক থেকে অতটা উন্নত কিনা। পরিচ্ছন্নতাবোধের গুরুত্ব বোঝে কিনা। যেকোন একজনেরও যদি সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে পরিচ্ছন্ন থাকাটা কঠিন হয়ে যাবে। সমাজেও তাই। আপনার এলাকায় যদি একটা পরিবারও অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে, তাহলে এলাকার রাস্তায় কলার খোসা, চিপসের প্যাকেট, ডাস্টবিনের বাইরে ময়লা দেখা যেতে পারে। গুলশান-বনানীতে জমির দাম ও বাড়ি ভাড়া এত বেশী করে রাখার একটা বড় কারণ নিম্নবিত্তের লোকদের ওখানে ঢুকতে না দেয়া, যাতে ওরা পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে। কিন্তু কেন নিম্নবিত্তের লোকজন এরকম? ব্যপারটা এমন না যে, বিত্ত নেই বলেই প্রতিটি মানুষ সাংস্কৃতিক দিক থেকে পরিচ্ছন্নতাবোধর অভাবে ভুগছে। আমি অনেক নিম্নবিত্তের মানুষকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে দেখেছি। মাটির ঘরে বাস করে কিন্তু চারদিক ঝকঝকে-তকতকে। তবুও শেষ পর্যন্ত এরা এই পরিচ্ছন্নতাটা ধরে রাখতে পারে না।
মূলত বিয়ে-শাদীর মাধ্যমে যখন অন্য পরিবার থেকে এমন কেউ ওখানে ঢুকে পড়ে যার এই পরিচ্ছন্নতাবোধ নেই, তখন ধীরে ধীরে এই পরিচ্ছন্ন পরিবারটাও অপরিচ্ছন্ন হতে থাকে। এদেশে বিয়ের আগে কন্যার বাড়িতে গিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে মেয়েকে দেখা হয়। অথচ দেখা উচিত ছিলো তাদের সাংস্কৃতিক দিকগুলো। তবে অনেকেই কন্যা দেখতে গিয়ে বাড়িঘরের পরিচ্ছন্নতা বোঝার চেষ্টা করে থাকে; কিন্তু ভুলভাবে। তারা ওয়াশরুমে ঢুকে কমোড আর বেসিন দেখে। অথচ ওগুলো গেস্ট আসার আগে পরিষ্কার করে ফেলা হয়। দেখা উচিত ফ্লোর শুকনা না ভেজা। ওয়াশরুমে পানি জমিয়ে রাখা আছে কি নেই। দেয়ালে ঝুল দেখা যাচ্ছে কিনা। ওয়াশরুমে দুর্গন্ধ আছে কিনা। এরকম আরো অনেক ব্যপার রয়েছে। বাসার ভেতরেও পরিষ্কার-পরিছন্নতা দেখে লাভ নেই। ওগুলো আপনি আসার আগেই সাজানো গোছানো শেষ। আপনাকে বারান্দা দিয়ে উকি দিয়ে নিচের দিকে দেখতে হবে। যদিও কিচেনের বারান্দা দিয়ে নিচে তাকিয়ে এটা পুরোটা বুঝবেন না। কারণ, কাজের বুয়ারা অনেক সময় ময়লা ফেলে বারান্দা দিয়ে।
আবার আপনার মেয়েকে যেমন ছেলে পক্ষ দেখতে আসছে আপনারো যাওয়া উচিত ছেলের বাড়িতে। গিয়ে তাদের সাংস্কৃতিক দিকগুলো জেনে আসুন। নয়তো আপনার পরিচ্ছন মেয়েটাকে বাকী জীবন অপরিচ্ছন্ন নোংরার মাঝে কাটাতে হবে।
পুনশ্চঃ কেউ ব্যক্তিগতভাবে নিবেন না দয়া করে। এর আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে যে কয়টা স্টেটাস দিয়েছি তাতে অনেকে মন খারাপ করেছেন বলে জেনেছি। অনেকে ধরে নিয়েছিলেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তের লোকজন নিয়ে আমার এলার্জি আছে। ভুল ভেবেছেন তারা।
কাজ করি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, বাদবাকী সব ভালো লাগা থেকে করা। নতুন কিছু শিখতে ভালো লাগে। গেমিং, বই পড়া, ফটোগ্রাফি, ভ্রমণ করা হয় ভালো লাগার জায়গা থেকে। আর ভালো লাগে চিন্তা করতে। সেসব চিন্তার কিছু কিছু প্রকাশ করবো এখানে।